বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার

কক্সবাজার বিশ্বের দীর্ঘতম অভগ্ন সমুদ্র সৈকত ও দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। এর প্রাচীন নাম হচ্ছে প্যালংকি। ব্রিটিশ শাসনামলে হিরাম কক্স নামে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক অফিসার পালংকির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকান শরণার্থী এবং স্থানীয় আদিবাসী রাখাইনদের মধ্যে বিদ্যমান বহু পুরোনো সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেন এবং শরণার্থীদের পুণর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই ১৭৯৯ খ্রীঃ মারা যান। তার কর্মকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁর নামে স্থানীয় একটি বাজারের নাম করন করা হয় কক্সবাজার। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ অঞ্চলটি কক্সবাজার হিসেবে পরিচিত হয়।

কিভাবে যাবেন

সড়ক ও আকাশ পথে আপনি ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে পারেন । ঢাকার কলাবাগান, মালিবাগ, আরামবাগ, কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন অসংখ্য বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এর দূরত্ব ঢাকা থেকে ৪১৪ কি.মি. ও চট্টগ্রাম থেকে ১৫২ কিঃমিঃ। পৌছতে সময় লাগে প্রায় ৮-১০ ঘন্টা, ভাড়া ৭০০ - ১৮০০ টাকা।

বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড ও জিএমজি এয়ারলাইন্স এর ফ্লাইট ঢাকা কক্সবাজার রুটে যাতায়ত করে। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট প্রতিদিন বেলা ২.০০ টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার এবং ২.২০ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ঢাকা রুটে চলাচল করে। সময় লাগে ১ ঘন্টা। সর্ব নিম্ন টিকিট মূল্য ৪৮০০ টাকা। যোগাযোগ- ঢাকা এয়ারপোর্ট সেলস অফিস: ০১৭১৩-৪৮৬৬৬০, কর্পোরেট অফিস-উত্তরা: ৮৯৩২৩৩৮, গুলশান সেলস অফিস: ০১৭১৩-৪৮৬৬৫৯, কাওরান বাজার সেলস অফিস: ০১৭১৩-৪৮৬৬৫৮, পল্টন সেলস অফিস: ০১৭১৩-৪৮৬৬৫৭ ।

কোথায় থাকবেন

কক্সবাজারে থাকার জন্য এখন অনেক আধুনিক পাঁচ তারা থেকে শুরু করে সাধারণ মানের অনেক হোটেল, মোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে ১০০০-৫০০০ টাকায় রয়েছে থাকার ব্যবস্থা। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রয়েছে, ফোন: হোটেল শৈবাল-৬৩২৭৪, মোটেল প্রবাল-৬৩২১১, পর্যটন কর্পোরেশনের ঢাকাস্থ হেড অফিস থেকেও এসব হোটেলের বুকিং দেওয়া যায়। যোগাযোগ: ২৩৩ এয়ারপোর্ট রোড, তেজগাঁও, ঢাকা। ফোন-৯১৪০৭৯০, ৯১২০৩৯২।

দর্শনীয় স্থান সমূহ


লাবনী বীচ

বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ এসব সৌন্দর্যের পসরা নিয়েই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ১২০ কি.মি. জুড়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী বীচ ধরে হেঁটে হেঁটে হিমছড়ির দিকে যতোই সামনে এগুবেন ততোই প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হবেন। সবুজঘেরা পাহাড় আর ডানদিকে সমুদ্রের নীল জলরাশি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনি অভাক ভাববেন আরো আগে কেন এলাম না। সকাল বেলা বের হলে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্যও দেখতে পাবেন। শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধ মন্দির, বার্মিজ মার্কেট, হিলটপ রেস্টহাউস, জাদি পাহাড়ে প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির, প্রাণী জাদুঘর ইত্যাদি কক্সবাজার ভ্রমণের সাথে যুক্ত হতে পারে।

সতর্কতাঃ সমুদ্রে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিন। এ সম্পর্কিত লাইফ গার্ডের বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড ও পতাকা রয়েছে বিচের বিভিন্ন স্থানে। জোয়ারের সময় সমুদ্রে গোসলে নামা নিরাপদ, এ সময় সবুজ পতাকা ওড়ানো হয়। ভাটার সময়ে সমুদ্রে স্নান বিপজ্জনক ভাটার টানে মুহূর্তেই হারিয়ে যেতে পারে যে কেউ। এ সময় লাল পতাকা উড়ানো হয় । কোনোভাবেই সমুদ্রের গভীরে যাবেন না। প্রয়োজেন পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ইয়াছির লাইফ গার্ডের সহায়তা নিন। ওদের জানিয়ে বীচে নামুন।


হিমছড়ি

কক্সবাজার কলাতলী থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিনে রয়েছে এই আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট হিমছড়ি । একপাশে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সমুদ্র, অন্য পাশে সবুজ বনানীর সাড়ি সাড়ি পাহাড়, মাঝ দিয়ে পিচ ঢালা রাস্তা; মাঝে মাঝে পাহাড়ী ছোট ছোট ঝর্নার কুল কুল শব্দ আর পাখির কলতান আপনার যাত্রাকে রোমাঞ্চিত করবে । এক কথায় স্বপ্নের মত মত সুন্দর।

হিমছড়িতে একটি ছোট পর্যটন কেন্দ্র আছে। টিকেট কেটে এখানে ঢুকতে হয়। পাহাড়ের উপরে আছে বিশ্রামাগার। প্রায় ২ শতাধিক সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়। কষ্টটা মুহুর্তেই ভুলে যাবেন যখন পাহাড়ের চুড়া থেকে কক্সবাজারের পুরো সমুদ্র সৈকতটা এক পলকে দেখতে পাবেন, দুর্লভ সে দৃশ্য।

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান

উদ্যানটি ১৯৮০ সালে ১৭.২৯ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গবেষণা ও শিক্ষণ, পর্যটন ও বিনোদন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ। উদ্যানে অনেকগুলো জলপ্রপাত রয়েছে, যার মধ্যে হিমছড়ি জলপ্রপাতটি সবচেয়ে বিখ্যাত। হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি চিরসবুজ ও প্রায়-চিরসবুজ ক্রান্তীয় বৃক্ষের বনাঞ্চল। এটি হাতির আবাসস্থল বলে ধারনা করা হয়। এছাড়া এ বনে মায়া হরিণ, বন্য শুকর ও বানর দেখা যায়। এ বনে ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৬ প্রজাতির উভচর প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়।

যেভাবে যাবেন
কক্সবাজার সৈকত থেকে প্রায় সবসময়ই খোলা জীপে করে হিমছড়ির যাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৫০-৭০ টাকা। বন্ধুরা মিলে গ্রুপ টুরে গেলে কলাতলী স্টেশন থেকে রিজার্ভ জীপে যেতে পারেন, লাগবে ১২০০-১৫০০ টাকা। আর দুই জনের ভ্রমন হলে রিক্সাই উত্তম বাহন; যাওয়া আসার ভাড়া লাগবে ১৫০-২৫০ টাকা। পথে রিক্সা থামিয়ে ঝর্নার পারে ঘুরে আসতে পারেন। দুপুরের রোদ কমে গেলে রওনা হতে পারেন, তাহলে সন্ধ্যার আগেই কলাতলী ফিরতে পারবেন।


ইনানী সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার কলাতলী লাবনী সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত এই সৈকত ইনানী। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে ইনানীর তীরে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর। চমৎকার নিরিবিল এই বীচ যেমন সুন্দর ঠিক তেমনই রোমাঞ্চকর কক্সবাজার হতে এই বীচে যাত্রার পথটি। জোয়ারের সময় সৈকতের এসব প্রবাল পাথর দেখা যাবে না, তাই এখানে যেতে হবে ভাটার সময়। সকাল বেলা যাওয়াই ভাল। সাগরপাড়ে বালির উপর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে বিশালাকার পাথর রাশি। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে সেসব পাথরের ওপর। বিস্তৃর্ণ বালি সৈকতে ছুটে বেড়ায় হাজারো লাল কাকড়া। স্বচ্ছ জলের তলায় দেখা যায় বালুর স্তর। বনভোজন আর সমুদ্র স্নানের জন্য চমৎকার এই সমুদ্র সৈকতটি।

যেভাবে যেতে হবে
ইনানী এবং হিমছড়ি একই পথে হওয়ায় সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যে বেড়িয়ে আসা যাবে দুটি জায়গা থেকে। কক্সবাজার কলাতলী বীচ থেকে লোকাল জিপে গেলে যাওয়া-আসার ভাড়া লাগবে ১৮০-২০০ টাকা। ১০-১৫ জনের গ্রুপ টুর হলে রিজার্ভ জিপ নিতে পারেন, লাগবে ১৮০০-২৫০০ টাকা। সিএনজি অটোরিক্সায় ৫-৬ ঘন্টার জন্য ভাড়া পড়বে ৪৫০-৫০০ টাকা। এছাড়াও কলাতলী পয়েন্ট থেকে চাঁন্দের গাড়ী বা রিক্সাতেও যেতে পারেন।

ডুলাহাজরা সাফারী পার্ক

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে ডুলাহাজারা রিজার্ভ ফরেষ্টে এই সাফারী পার্কটি অবস্থিত। কক্সবাজার হতে পার্কটির দূরত্ব ৫০ কি:মি: । এই পার্কে তথ্য শিক্ষা কেন্দ্র, প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর, পরিদর্শন টাওয়ার এবং বিশ্রামাগার রয়েছে। পার্কেটির চারদিকে বেষ্টনী রয়েছে । পার্কের ভিতরে বাঘ, সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করে।
সাফারী পার্ক হলো সরকার ঘোষিত এলাকা যেখানে বণ্যপ্রানীদেরকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিপালন করা হয়। এর মধ্যে বন্য প্রাণীর বংশবৃদ্ধি ও অবাধ বিচরণের সুযোগ থাকে এবং পর্যটকগণ নিরাপদ ব্যবস্থায় পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে ভ্রমণ করে শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ পেয়ে থাকে। চিড়িয়াখানায় জীব-জন্তু আবদ্ধ অবস্থায় থাকে আর সাফারী পার্কে মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে।

যেভাবে যেতে হবে 
কক্সবাজার শহর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা কিংবা মাইক্রোবাস অথবা পাবলিক বাসে করে আসতে পারেন সাফারী পার্কে। লোকাল বাসে ভাড়া ৫০ টাকা, সিএনজি ৬০০ – ৮০০ টাকা, মাইক্রোবাস ৫০০ – ২০০০ টাকা। সর্বসাধারনের জন্য প্রবেশ ফিঃ ১০ টাকা, ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ৫ টাকা, গাড়ী পাকিং ২০ টাকা ।


সোনাদিয়া দ্বীপ

সোনাদিয়া কক্সবাজার জেলার মহেশখালি উপজেলার একটি সুন্দর দ্বীপ। এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৭ বর্গ কিমি। কক্সবাজার থেকে প্রায় ১৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালি দ্বীপের দক্ষিনে দ্বীপটি অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালি দ্বীপ থেকে বিছিন্ন হয়েছে। তিন দিকে সমুদ্র সৈকত, সাগর লতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন, সাগরের গাঢ় নীল জল, লাল কাঁকড়া, এবং বিচিত্র প্রজাতির জলাচর পাখি দ্বীপটিকে করেছে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এখানকার খালের পানি এতোটাই স্বচ্ছ ও টলটলে, দেখে মনে হবে যেন কোনো কাঁচের উপর দিয়ে খালের তলদেশ দেখা যাচ্ছে। দ্বীপের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২০০০ জন। মাছ ধরা এবং মাছ শুকানো, চিংড়ি ও মাছের পোনা আহরন দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা। চারিদিকে নোনা পানি বেষ্টিত হওয়ায় এই দ্বীপে তেমন কোন খাদ্য শষ্য উৎপাদন হয় না, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র মহেশখালি থেকে ক্রয় করে আনতে হয়।

যেভাবে যাবেন
কক্সবাজারের কস্তুরিঘাট থেকে স্পিডবোট বা ট্রলারে যাবেন মহেশখালী। মহেশখালীর গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙা পর্যন্ত যেতে হবে বেবিট্যাক্সিতে। সেখান থেকে ট্রলারে যাবেন সোনাদিয়া। আবার কক্সবাজার থেকে সরাসরি স্পিডবোট ভাড়া করেও সোনাদিয়া যেতে পারেন, সে ক্ষেত্রে অনেক ভাড়া গুনতে হবে।


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন