ভ্রমন যাবেন ? করনীয় সম্পর্কে জেনে নিন

ঘুরতে আমরা কম বেশী সবাই পছন্দ করি, কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও প্রায় সময়ই আমরা বেড়াতে যেতে পারি না। পর্যটন বা আনন্দ ভ্রমন উপভোগ করার জন্য জীবনে তিনটি বস্তুর প্রয়োজন, তা হলো (১) অর্থ, (২) সময়, (৩) শারীরিক সামর্থ্য। তিনটির মধ্যে কমপক্ষে একটির অভাব মানুষের জীবনে সবসময় থেকেই যায়। যেমন ছাত্র জীবনে সময় থাকে, শারীরিক সামর্থ্যও থাকে, কিন্তু অভাব অর্থের। কর্ম জীবনে অর্থ থাকে, শারীরিক সামর্থ্য থাকে, কিন্তু সময় থাকে না। অবসর জীবনে টাকা থাকে, সময়ও থাকে কিন্তু তখন আর শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যারা এই তিনটা বস্তুর সমন্বয় করতে পারে তারাই পারে জীবনটাকে উপভোগ করতে। মানব জীবনটা খুবই ছোট, তাই যখনি সুযোগ করতে পারবেন তখনি বেড়িয়ে পড়ুন স্রষ্টার এই অপরূপ সৃষ্টি দেখতে। আর ভ্রমনের পূর্বে প্রস্তুতি সরূপ করনীয় সম্পর্কে এক নজর চোখ বুলিয়ে নিন।

ভ্রমনের পূর্বে
১। ভ্রমন এলাকায় কোন রোগের প্রাদুর্ভাব আছে কিনা তা জেনে নিন।
২। আপনার কোন অসুখ থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধ সাথে নিন।
৩। ভ্রমনের পূর্বের রাতে ভাল করে ঘুমানো দরকার।
৪। ভ্রমন শুরু করার আগে ভরপেট না খাওয়া ভাল।

যাত্রাকালে
১। দীর্ঘ ভ্রমনে পা দুটো যতটা সম্ভব ছড়িয়ে বসবেন। মাঝে মাঝে পা নাড়াচাড়া করুন যাতে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে।
২। যানবাহন চলাকালে কোন বই বা খবরের কাগজ পড়বেননা এবং মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার হতে বিরত থাকুন। কেননা এতে করে চোখের উপর মারাত্মক চাপ পড়ে।
৩। একটানা বেশিক্ষন না বসে মাঝে মাঝে হাটুন।

ভ্রমনে সঙ্গে যা যা নিবেন
১। ভ্রমনের আগের রাতে প্রয়োজনীয় জামাকাপড় ব্যাগে নিয়ে নিন; অপ্রয়োজনীয় জামা কাপড় দিয়ে ব্যাগ ভর্তি করবেন না।
২। ফাস্ট এইড বক্সে প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্রের সাথে ব্যান্ডেজ, সার্জিক্যাল কাঁচি, থার্মোমিটার নিন। ফাস্ট এইড ওষুধ হিসাবে - এন্টিসেপটিক মলম যেমন নেবানল, খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট, গ্যাসট্রিক সমস্যার জন্য এন্টাসিড, বমির জন্য এভোমিন জাতিয় টেবলেট, সর্দি কাশি বা এলার্জির জন্য হিস্টাসিন, আগুনের পোড়া সমস্যার জন্য বার্নাসল জাতীয় ক্রিম নিন।
৩। বেড়াতে যাওয়ার আগে সানগ্লাস ও টুপি নিতে ভুলবেন না।
৪। অবসর সময় কাটানোর জন্য হাল্কা ধরনের গল্পের বই, মোবাইলে গান শুনার জন্য এয়ার ফোন, সঙ্গীত প্রেমিরা সাথে করে গিটার নিতে পারেন। একটি অসাধারন সঙ্গীত সন্ধ্যারও আয়োজন করে ফেলতে পারেন।
৫। ভ্রমনে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যেমন মোবাইল চার্জার, ক্যামেরা, পেনড্রাইভ নিতে ভুলবেন না।
৬। যারা চা বা কফি প্রেমী তারা সাথে করে টি ব্যাগ, কফি এবং পানি গরম করার জন্য ওয়াটার হিটার বা কফি মেকার নিয়ে যেতে পারেন।৭। বেড়াতে গিয়ে যদি একটু বেশি আনন্দ করতে চান তাহলে নিজেরাই বার-বি-কিওর ব্যবস্থা করতে পারেন। এর জন্য শুধু কয়েকটি গ্রিল স্টিক ও একটা গ্রিল স্ট্যান্ড হলেই হবে। তারপর আয়োজন করে ফেলবেন একটি জমজমাট বার-বি-কিও পার্টি।
৮। ভ্রমনের সময় যেকোনো ধরনের বিপদ হতে পারে তাই সাথে নিরাপত্তার সাথে একটি পকেট নাইফ, টর্চ লাইট, লাইটার বা ম্যাচ, কম্পাস রাখতে পারেন। কারন কখন কোন জিনিসটা কাজে লেগে যাবে তা বলা যায় না।
৯। ভ্রমনে সব সময় সাথে পানির বোতল রাখবেন; এ সময় শরীর থেকে প্রচুর পানি বেড়িয়ে যায়; তাই ঘন ঘন পানি অথবা স্যালাইন খাবেন।

সর্তকতা
১। জুতার দিকে বাড়তি মনোযোগ প্রয়োজন, কারন ভ্রমনে হাটার ব্যাপারটাই বেশী থাকে। আরামদায়ক কেডস হলে ভালো হয়। মেয়েরা হিল জুতা ব্যবহার না করাই ভাল।
২। দূরবর্তী স্থানে লেপটপ না নিয়ে যাওয়াই ভালো।
৩। ছেলেদের পরিধেয় পোষাক হিসাবে টি-শার্ট ব্যবহার করা উত্তম।
৪। মেয়েদের স্বর্ণের গহনা বা দামি কোন জিনিস না নেওয়াই ভাল।
৫। একটি কার্ডে আপনার ঠিকানা লিখে ব্যাগে রাখবেন। ব্যাগ হারিয়ে গেলে যাতে ফেরত পাবার সম্ভাবনা থাকে।
৬। ভ্রমনে দামী মোবাইল ব্যবহার না করাই উত্তম, কারন ভ্রমনকালীন অপরিচিত স্থানে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার সম্ভবনা বেশী।
৭। মানিব্যাগ অবশ্যই সাবধানে রাখবেন। সব টাকা এক জায়গায় রাখবেন না।

পাহাড়ি এলাকায় বেড়াতে গেলে পালনীয় কিছু সর্তকতা
১। ভাল গ্রিপের জুতা বা কেডস পড়ুন। ঝিরি পথ পাড়ি দিতে চাইলে প্লাষ্টিকের গ্রিপওয়ালা স্যান্ডেল পড়ুন।
২। পাহাড়ি সংস্কৃতির প্রতি অশালীন কোন আচরণ বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।
৩। বন্য জীবজন্তু বা পরিবেশের ক্ষতি করবেন না।
৪। পাহাড়িদের বিশেষ করে মেয়েদের বিনা অনুমতিতে ছবি নেবেন না।
৫। কোনো অবস্থাতেই গাইড ছাড়া একা কোথাও যাবে না।
৬। ঝিরি পথে হেটে যাবার জন্য সঙ্গে উপযুক্ত পরিমান খাবার ও পানি নিন।

মন্তব্যসমূহ