নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, বিহার, ভারত

বহুকাল আগের কথা, প্রায় দের হাজার বছর তো হবেই। ঘোড়া-গাধার পিঠে চড়ে পর্বত-মরুপ্রান্তর পাড়ি দিয়ে জড়ো হতো এ জায়গাটায়; কারন ওখানে ছিল প্রাচীন দুনিয়ার মস্ত এক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় এটি। প্রাচীন ভারতের মগধ (বর্তমানে বিহার) রাজ্যের রাজধানী রাজগীর থেকে ১০ কি.মি. দূরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। কবে স্থাপিত হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয় তা একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে না পারলেও মোটামুটিভাবে জানা যায় যে, গুপ্ত রাজবংশের বিখ্যাত সম্রাট কুমারগুপ্ত এটি নির্মান করেছিলেন। কুমারগুপ্তের রাজত্বকাল ৪১৫ থেকে ৪৫৫ খ্রীঃ পর্যন্ত, সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪৫৫ খ্রীঃ এর পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা বলা যায়। দেশ-দেশান্তরের ছাত্ররা উচ্চ শিক্ষার আশায় ভিড় জমাতো সেখানে। যতটা জানা যায় ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও চীন, জাপান, মঙ্গোলিয়া,পার্শিয়া, তুরস্ক, মায়ানমার এমনকি দ্বীপদেশ ইন্দোনেশিয়া থেকেও এখানে আসতো ছাত্ররা।
পৃথিবীর অনেক নামকরা জ্ঞানী মানুষেরা ছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রাচীন বাংলার জ্ঞানবৃক্ষ শীলভদ্র, পদ্মসম্ভব, চন্দ্রগোমী, কমলশীল, শান্তরক্ষিত প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ পন্ডিতরাও ছিলেন এখানকার শিক্ষকতায়। ততকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালটিতে ছাত্র সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার আর শিক্ষক দুই হাজার। খ্যাতিসম্পন্ন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা যেত বিনা বেতনে, কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে কঠোরভাবে মেধাযাচাই করে ভর্তি করানো হতো ছাত্র,আজকের ইউরোপ আমেরিকায় যেমন আই ই এল টি এস বাধ্যতামূলক , তেমনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য সংস্কৃত ভাষায় দক্ষতা ছিল বাধ্যতা মূলক । বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও হিন্দু দর্শন, বেদ, ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা, ব্যকরণ, ভাষাতত্ত্ব, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, ধাতুবিদ্যা, শিল্পবিদ্যা, দর্শনশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে এখানে শিক্ষা প্রদান করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল বিশাল তিনটি গ্রন্থাগার ছিল তিনটি অট্টালিকায়; এগুলোর নাম রত্নদধি, রত্নসাগর ও রত্নরঞ্জক।
মাটি খুঁড়ে আবিস্কার করা হয়েছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধবংসাবশেষ। আজ নেই সেই জনকোলাহল, নেই স্বনামধন্য সেই শিক্ষক শিক্ষয়ত্রীগন কিন্তু তাদের স্মৃতিধন্য নালন্দার ধবংসাবশেষ রয়ে গেছে আজও। সেই স্মৃতিই আজ ও আগামীর মানুষের অহংকার।

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ খ্রীঃ পুনরায় চালু করা হয় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের নেতৃত্বে একদল পন্ডিতের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়টি পুণর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশ্বের সেরা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য একটি আদর্শ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মান তাদের লক্ষ্যে।

মন্তব্যসমূহ