প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন

সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখন্ড টেকনাফ থেকে ৯ কিমি দক্ষিনে সমূদ্র বক্ষে অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপটি স্থানীয়দের নিকট নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরচিতি। উত্তর-দক্ষিণে লম্বাকৃতি ও মাঝখানে সরু এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিমি এবং দৈর্ঘ্য ৫.৬ কিমি। এর দক্ষিণ ভাগে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি বিচ্ছিন্ন অংশ আছে, যা স্থানীয়ভাবে ছেড়া দ্বীপ নামে পরিচিতি। জনশূন্য এ অংশে ভাটার সময় হেটে যাওয়া যায়। ছেঁড়া দ্বীপে যেতে চাইলে খুব ভোরে জোয়ার আসার আগে ট্রলার বা স্পীড বোটে রওনা হবেন। সময় লাগবে প্রায় ৩০ মিনিট।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বানিজ্যের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াতের সময় বণিকগন এই দ্বীপটি বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করত। সম্ভবত এরাবিয়ান বনিকেরা এই দ্বীপের নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরা। উনিশ শতকের শেষের দিকে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মানুষ জন এসে এই দ্বীপে বসবাস শুরু করে। পরবর্তিতে ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরীপ দল খ্রিষ্টান সাধু মার্টিনের নামানুসারে এ দ্বীপের নাম করন করে সেন্ট মার্টিন।

বিভিন্ন প্রজাতির প্রবাল, শামুক-ঝিনুক, সামুদ্রিক শৈবাল, মাছ, পাখি প্রভৃতি প্রানী বৈচিত্র্য সম্পন্ন এ দ্বীপটির গাঠনিক প্রধান উপাদান হল চুনাপাথর। ভূতাত্ত্বিকগনের মতে প্রাই ৪০০০ বছর পূর্বে সামুদ্রিক প্রবালের মৃতস্তুপ জমা হয়ে সৃষ্ট হয়েছে এ দ্বীপ। সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন স্থান হিসেবে দ্বীপটি বেশ খ্যাত।

বর্তমানে সেন্ট মার্টিনের লোকসংখ্যা প্রায় ৭০০০। দ্বীপটির মাঝের দিকে মিঠা পানি সমৃদ্ধ কিছু জলাভূমি ও কিছু কৃষি জমি আছে। বাসিন্দাদের প্রধান পেশা মাছ ধরা, তাছাড়া অনেকে ডাব, নারিকেল, ঝিনুক বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

পর্যটন মৌসুমে টেকনাফ থেকে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ আসা যাওয়া করে। বর্তমানে এখানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল ও একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। কোন বিদ্যুৎ না থাকায় হোটেল সমূহে রাত ১০টা পর্যন্ত জেনারেটর দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করে থাকে।

সর্তকতাঃ স্টীমার থেকে নামার পর ডান দিকে (দ্বীপের সর্ব পূর্ব দিকে) যে সৈকত রয়েছে, তা বিপজ্জনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত। তিন দিক থেকে সমূদ্র স্রোত এখানে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে নিচের দিকে আকর্ষন করে। সুতরাং এ স্থানটি এড়িয়ে চলাই মঙ্গল জনক।

মন্তব্যসমূহ