সিলেট - একটি কুড়ি দুটি পাতার দেশ

পাহাড়, নদী, হাওর-এ পরিপূর্ণ চা উৎপাদনে বিশ্বের অন্যতম এ স্থানটি একটি কুড়ি দুটি পাতার দেশ নামে পরিচিত। হযরত শাহ জালাল, শ্রী চৈতন্য দেব, হাসন রাজা, রাধা রমন, আব্দুল করিম প্রভৃতি অসংখ্য কিংবদন্তীর স্মৃতিধন্য পুন্যভূমি এই সিলেট অঞ্চল।

কিভাবে যাবেন
সড়ক পথঃ ঢাকার সায়েদাবাদ, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য বাস সিলেটের পথে যাতায়ত করে। এসি বাসের মধ্যে গ্রীণ লাইন, আল-মোবারাকা সোহাগ, সৌদিয়া, এস.আলম আর নন-এসির মধ্যে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ পরিবহন, মামুন, ইউনিক প্রভৃতি পরিবহন উল্লেখযোগ্য। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৭০ কিমি, বাসে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা আর ভাড়া ১২৫-১০১৮ টাকা।
রেল পথঃ ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘন্টা, ভাড়া ৩০০-১১০০ টাকা।
বিমান পথঃ ঢাকা সিলেট পথে প্রতিদিন - বাংলাদেশ বিমান, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, ভিকিং হেলাস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এর ফ্লাইট যাতায়ত করে। সময় লাগে ৪৫ মিনিট, টিকিট মূল্য ৩২০০-৭০০০ টাকা।

যা যা দেখবেন 
সিলেট অঞ্চলে দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে জাফলং, লোভছড়া ঝরনা, শ্রী চৈতন্য দেবের পৈত্রিক নিবাস, রাতার গুল, লালখাল, হযরত শাহজালাল (র:) মাজার, জৈন্তাপুর রাজবাড়ি, তামাবিল, হাছন রাজার মিউজিয়াম (সুনামগঞ্জ), মুনিপুরী রাজবাড়ি প্রভৃতি উলেখযোগ্য।

জাফলং
সিলেট নগরী থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতি কন্যা জাফলং। এ অঞ্চলটি ভারতীয় সীমান্তবর্তী পাহাড়ের সন্নিকটে অবস্থিত। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সাথে গড়িয়ে আসে প্রচুর নূড়ি পাথর। সেই পাথর উত্তোলন, ভাঙ্গা বিক্রয় নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে পাথর ভাঙ্গার শিল্প। সারা দেশে রাস্তা, ভবন, সেতু প্রভৃতি নির্মানে ব্যবহৃত পাথর এখান থেকে যোগান দেয়া হয়।

সিলেট শহরের মেন্দিবাগ থেকে সিএজি, টেম্পু বা মাইক্রোবাস করে সহজে যেতে পারেন জাফলং। সময় লাগবে প্রায় ১.৩০ ঘন্টা, ভাড়া পরবে বাসে ৫৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১৭০০-২০০০ টাকা, সি এন জি চালিত অটো রিক্সা ৭০০ টাকা।
যাওয়ার পথে জৈন্তাপুরস্থ তামাবিল কয়লা খনি দেখতে যেতে পারেন। গাড়ি থেকে নামার পর একটু সামনে এগুলে দেখতে পাবেন খাসিয়াদের লাগানো সারি সারি সুপারি গাছ, আর পানের বাগান, কমলার বাগান, আনারসের বাগান, লেবুর বাগান, চায়ের বাগান। ঘুরে দেখতে পারেন আদিবাসী খাসিয়া পল্লী। জাফলং এর স্বচ্ছ পানির নিচে বিছানো পাথর দেখে আপনি না নেমে পারবেন না।

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
জলা ভূমির বনকে বলা হয় সোয়াম্প ফরেস্ট। আর এ জাতীয় একটি বন হল রাতার গুল। বছরের বেশীর ভাগ সময়ই এটি প্লাবিত থাকে। শীতে আগমন ঘটে অতিথি পাখির। এ বনে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। আরো আছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, পাখি, মাছ, প্রাণী।

সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে এই জলা বনের অবস্থান। উত্তরে গোয়াইন নদী, দক্ষিণে বিশাল হাওর আর মাঝখানে রাতারগুল। রাতারগুল যাওয়ার রয়েছে বেশ কয়েকটি পথে। সিলেট-জাফলংয়ের গাড়িতে উঠে নেমে যাবেন সারিঘাট, এখান থেকে টেম্পোতে যাবেন গোয়াইনঘাট বাজার। বাজারের পাশেই নৌঘাট। এখান থেকে রাতারগুল যাওয়া-আসার জন্য নৌকা রিজার্ভ করতে হবে। তবে এই নৌকা রাতারগুল বনের ভেতরে যাবে না, বনে ঢুকতে হবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ডিঙি নৌকা ভাড়া করে এবং প্রবেশের পূর্বে অবশ্যই রাতারগুল বন বিট অফিস থেকে অনুমতি নিতে হবে।

আবার সিলেটের আম্বরখানা মোড় থেকেও সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চলে যেতে পারেন মোটরঘাট। যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। সেখানকার নৌঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে রাতারগুল যেতে পারবেন।

হযরত শাহজালাল (র:) মাজার
হযরত শাহজালাল (র:) ছিলেন উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত দরবেশ ও পীর। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিলেট অঞ্চলে তার আগমন ঘটে। সিলেট অঞ্চলে যত পর্যটক আসে তার বেশের ভাগই এই মাজার দর্শনে আসেন।

শাহজালাল (র.) এর মাজার চত্বরের উত্তরদিকে রয়েছে একটি পুকুর। এই পুকুরে আছে অসংখ্য গজার মাছ। এই গজার মাছ ও কবুতর নিয়ে জনগনের মাঝে বেশ কিছু অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত আছে।

হযরত শাহজালাল (র:) এর আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় পেয়ে হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (র:) তাঁকে প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ একজোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন। সিলেট ও এর আশপাশের অঞ্চলে বর্তমানে যে সুরমা রঙের কবুতর দেখা যায় তা ওই কপোত যুগলের বংশধর এবং জালালী কবুতর নামে খ্যাত।

শাহজালাল এর মাজারের পাশেই রয়েছে একটি কূপ। এই কূপে সোনালী ও রুপালী রঙের মাছে প্রত্যক্ষ করা যায়। চারপাশ পাকা এই কূপে দিনরাত পানি প্রবাহিত হয়।

মাজারের দক্ষিণ দিকে গ্রীলঘেরা তারকা খচিত ছোট্ট ঘরটি শাহজালালের চিল্লাখানা। স্থানটি মাত্র দু’ফুট চওড়া। কথিত আছে- হযরত শাহজালাল এই চিল্লাখানায় জীবনের ২৩ বছর আরাধনায় কাটিয়েছেন। শাহজালাল কেবল একজন পীর ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বীর মোজাহিদ। দরগার পাশ্ববর্তী মুফতি নাজিমুদ্দিন আহমদের বাড়িতে হযরত শাহজালালের তলোয়ার ও খড়ম সংরক্ষিত আছে। প্লেট ও বাটি সংরক্ষিত আছে দরগাহ’র মোতওয়াল্লির বাড়িতে। এগুলো দেখতে প্রতিদিন উৎসুক মানুষেরা ভীড় জমায়।

লালখাল
লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত। অপূর্ব সৌন্দর্যে ভরপুর এই পাহাড়ি এলাকাটি বাংলাদেশের সবোর্চ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান। সারি নদীর স্বচ্চ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা অথবা স্পীডবোটে করে আপনি যেতে পারেন লালাখালে।

লালাখাল যেতে হলে সিলেট শহরের সোবহানী ঘাট অথবা টিলাগড় থেকে জাফলংগামী বাসে, নামতে হবে সারিঘাট নামক স্থানে। সারিঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যাওয়া যাবে লালাখাল। সময় লাগবে ১ ঘন্টার মত। সবচেয়ে ভাল হয় ১০ জনের একটা গ্রুপ নিয়ে গেলে। এতে মাথাপিছু খরচ সাশ্রয় হবে।

মন্তব্যসমূহ