মাধবকুন্ড ঝর্ণার শীতল পরশ

মাধবকুন্ড ঝর্ণার অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানায়। সিলেট শহর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ৬০ কিমি, আর  শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ৭০ কিমি। কুলাউড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ৩০ কিমি এবং কাঁঠালতলী থেকে ৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত।

এটি বাংলাদেশের বড় ঝর্নাধারার গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় ২০০ ফুট উপর থেকে নেমে আসা ঝর্না ধারার শীতল স্পর্শ আর ঝর ঝর শব্দ আপনাকে বিমোহিত করবেই। শীত মৌসুমে জলধারা অনেকটা কম থাকে কিন্তু বর্ষায় থাকে অত্যন্ত প্রানবন্ত। সরকারি উদ্যোগে পুরো এলাকাটি নিয়ে তৈরী হয়েছে ইকোপার্ক। ১০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। জলপ্রপাতের পাশেই রয়েছে কমলা, চা, লেবু, সুপারি, পানের বাগান আর আদিবাসী খাসিয়া পল্লী। এসকল জায়গা থেকে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন আর অর্জন করতে পারেন ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

জনশ্রুতি শ্রুতি আছে প্রায় হাজার বছর আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক সন্ন্যাসী এখানে ভগবান শ্রী মাধব এর আরাধনা করতেন। জলরাশি নির্গত কুণ্ডের ডানদিকে রয়েছে বিশাল গুহা। এটি ছিল সন্ন্যাসীর সাধনার স্থল। সন্ন্যাসী তার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতেন এই ঝর্ণার শীতল জল দিয়ে। সম্ভবত ভগবান মাধব এর আর্বিভাব নামানুসারে জলধারাটির নাম মাধবকুণ্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এখানে ভগবান মাধবের মন্দির ছাড়াও একটি শিব মন্দির রয়েছে। মাধবকুণ্ড হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি তীর্থ স্থান। ভগবান মাধবেশ্বরের আশির্বাদ প্রার্থনায় প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এখানে হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। পুনার্থীরা ঝর্নার পবিত্র জলে স্নান করে পাপ মুক্তির কামনা করেন। সে সময় এখানে বিশাল মেলা বসে।

মাধব কুন্ডের নিকটবর্তী রয়েছে আরেকটি ঝর্না পরীকুন্ড। হাতে সময় থাকলে বোনাস হিসেবে দেখে আসতে পারেন বুনো ঝর্নাটি। শিব মন্দিরের বিপরীত দিকে রাস্তার সিড়ি ধরে নেমে গেলে মাধবকুন্ড থেকে নেমে আসা ঝর্নার ছড়া দেখতে পাবেন। আর ওই ছড়া দিয়ে ১০-১৫ মিনিট হাটলেই পেয়ে যাবেন পরিকুন্ড জলপ্রপাত। পথ চিনতে কষ্ট হলে স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

মাধবকুন্ড থেকে বড়লেখা যাওয়ার পথে বড়লেখা-কুলাউড়া রোডের পূর্বপাশে একটি রাস্তা চলে গেছে সোজা হাকালুকি হাওর। একদিন সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এ হাওর। শীত মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে অতিথি পাখীর সমাগম ঘটে।

যেভাবে যাবেন
রেলপথে যেতে চাইলে, ঢাকা থেকে সিলেটগামী ট্রেনে কুলাউড়া স্টেশনে নেমে যাবেন। তারপর বাসে কাঁঠালতলী বাজার এবং অটোরিকশায় চলে যাবেন মাধবকুন্ড। কুলাউড়া থেকে সিএনজি ভাড়া করেও যেতে পারেন মাধবকুন্ড।

সড়ক যেতে চাইলে ঢাকা থেকে বাসে মৌলভীবাজার তারপর অন্য বাসে চলে যাবেন কাঠালতলী বা বড়লেখা। সেখান থেকে অটোরিক্সায় মাধবকুন্ড।

সিলেট বা শ্রীমঙ্গল থেকে যেতে চাইলে ট্রেনে বা বাসে চলে যেতে পারেন বড়লেখা। সেখান থেকে অটোরিক্সায় মাধবকুন্ড।

ভাড়াঃ ঢাকা থেকে সিলেট বা মৌলভীবাজার বাস ভাড়া ৩৫০-৪০০ টাকা, অথবা ট্রেনে ভাড়া সিলেট বা কুলাউড়া ১৮০ টাকা, কুলাউড়া থেকে সিএনজিতে মাধবকুন্ড ভাড়া ৩০০-৪০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন
মাধবকুন্ডে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের একটি রেষ্টুরেন্ট সহ রেষ্টহাউজ এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন ২টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। ঝর্নার নিকটে জেলা পরিষদের দুই কক্ষের একটি বিশ্রামাগার আছে, এখানে রাত্রি যাপন করতে হলে কমপক্ষে ৭ দিন আগে থেকে বুকিং দিতে হবে। তাছাড়া বড়লেখা কোন হোটেলেও থাকতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ