বৈচিত্রময় এই জনপদে আদিবাসী ও বাঙালীসহ প্রায় ১৪টি জনগোষ্ঠি বসবাস করে। লেক পাহাড় আর আদিবাসী কালচার সব মিলিয়ে নৈশর্গিক সৌন্দর্যের মিলন ক্ষেত্র এটি। রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থানের মধ্যে কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ, সুবলং ঝর্না, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, রাজা হরিশ চন্দ্র রায়ের আবাসস্থলের ধবংসাবশেষ, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কাপ্তাইয়ে রয়েছে আকর্ষনীয় বেশ কিছু পিকনিক স্পট যেমন- কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, লেকভিউ পিকনিক কর্ণার, বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্স, ওয়াগ্গা চা বাগান, পাহাড়িকা পিকনিক স্পট, বনকুঞ্জ পিকনিক স্পট, কর্ণফুলী ভিউ ক্লাব পিকনিক স্পট ও ফ্রিং খিয়ং ফরেষ্ট পিকনিক স্পট। গ্রুপ টুরে গেলে এসব স্পট ভাড়া নিতে পারেন।
কাপ্তাই লেক
বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করা হলে অত্র এলাকার কৃষি জমি, বনভূমি ও জন বসতি সহ পাহাড়ে ঘেরা বিস্তৃর্ণ অঞ্চল পানির নিচে ডুবে গিয়ে এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। কৃত্রিম এ হ্রদের আয়তন ২৯২ বর্গমাইল। রাঙামাটি বেড়াতে এলে কমপক্ষে ১ দিন রাখবেন শুধু লেকে নৌভ্রমনের জন্য। হ্রদের মাঝে ছোট ছোট কিছু দ্বীপ রয়েছে যেমন পেদা টিং টিং , টুক টুক, চেং পেং ইত্যাদি। পেদা টিং টিং দ্বীপে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, এখানে পাবেন উপজাতিয়দের রান্নার স্বাদ, আর পূর্ণিমা রাতে এখানে বসে উপভোগ করতে পারেন কাপ্তাই হ্রদের অসাধারণ রূপ।
টুক টুক এ আছে একটি ইকো পার্ক। নৌ-ভ্রমণের জন্য রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও পর্যটন ঘাটে স্পীডবোট ও নৌযান পাওয়া যায়। ভাড়ার পরিমাণ ঘন্টায় স্পীড বোট ১২০০-১৫০০ টাকা এবং দেশীয় নৌযান ৫০০-৮০০ টাকা। রিজার্ভ বাজার শহীদ মিনার থেকে টুকটুক ইকো ভিলেজ এ নিয়মিত নৌযান যাতায়ত করে, জন প্রতি ভাড়া ২০ টাকা।
কাপ্তাই বাঁধ ও পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র
এই বাঁধের সাথে কাপ্তাই লেকের নিবির সম্পর্ক রয়েছে কারন এর জন্যই লেকেটির সৃষ্টি হয়েছে। লেকের পানি কর্নফুলী নদীতে গমন স্থলে বাধ দিয়ে এই প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। ১৯৬২ সালে স্থাপিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের বৃহত্তম জল বিদ্যুৎ প্রকল্প। এর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।
কাপ্তাই হ্রদের ঝুলন্ত ব্রীজ
কাপ্তাই লেককে ঘিরেই মূলত রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। এই লেকের উপর দুই টিলার মধ্যবর্তি স্থানে রয়েছে এ ঝুলন্ত সেতু, যা কিনা রাঙ্গামাটির প্রতীক-এ পরিনত হয়েছে। এই ব্রীজ থেকে লেকের অনেকাংশ দেখা যায়। নৌ ভ্রমন সম্ভব না হলে অনেকে এ ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করে। এর পাশেই রয়েছে নৌঘাট। ইচ্ছে করলে এখান থেকে সাম্পান নৌকা ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন সুবলং ঝর্না।
উপজাতীয় যাদুঘর
রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশ পথেই অবস্থিত এই যাদুঘর। এ যাদুঘরে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীদের অলংকার, পোষাক, প্রাচীন মুদ্রা, বাদ্যযন্ত্র, অস্ত্র, প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ, পুঁতিপত্র, তৈলচিত্র ও উপজাতীয় জীবনধারার বিভিন্ন আলোকচিত্র রয়েছে। যা দেখে জাতিসত্তাসমূহের জীবনাচার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। জাদুঘরটি সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৯.৩০ টা থেকে বিকেল ৪.৩০ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। শনি, রবি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে। জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য বড়দের পাঁচ টাকা ও ছোটদের দুই টাকা।
আরও দেখে আসতে পারেন- বর্তমান চাকমা রাজবাড়ি, বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাজবন বিহার, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি।
পাহাড়ি ঝর্ণা সুবলং
রাঙ্গামাটির অন্যতম সুন্দর দর্শনীয় স্থান এটি। রাঙ্গামাটি শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মনোরম ঝর্নাটি। শুভলং যাওয়ার পথটি বেশ চমৎকার। দুপাশে উঁচু পাহাড় তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা কাপ্তাই লেক। সেই লেকে নৌবিহার করে চলার আনন্দই আলাদা। বর্ষা মৌসুমে ঝর্ণার জলধারা প্রানবন্ত হয়ে উঠে, প্রায় ৩০০ ফুট উচু থেকে নীচে আচড়ে পড়ে আর অপূর্ব শব্দ ও দৃশ্যায়নে পর্যটকদের মুগ্ধ করে। ঝর্নার স্রোতের উপর ছোট একটি সেতু করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। ঝর্নাস্নান শেষে আপনি সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন সুবলং বাজার। হ্রদের তীরে অবস্থিত স্থানীয় এই বাজারে দুপুরের খাবারটি সেরে নিতে পারেন, হ্রদ থেকে ধরা মাছের ঝোল বা স্থানীয় কোন রান্না মন্দ হবে না।
যেভাবে যাবেনঃ রাঙ্গামাটি শহর থেকে ইঞ্জিন বোটে শুভলং যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। রিজার্ভ বাজার, পর্যটন কমপ্লেক্স বা তবলছড়ি বাজার থেকেও ইঞ্জিন বোট ভাড়া পাওয়া যায়। যাওয়া আসার ভাড়া প্রায় ৭০০- ১৫০০ টাকা লাগবে। প্রতি নৌকায় ১০ থেকে ২০ জন যাওয়া যায়। সম্প্রতি চালু হয়েছে এই পথে আধুনিক জলযান কেয়ারী কর্ণফুলী। এছাড়া রিজার্ভ বাজার হতে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে লোকাল লঞ্চ ছাড়ে। সকালের দিকে যেতে পারলে ফিরতি পথে পেয়ে যাবেন কোন লঞ্চ।
পাহাড়ি উচু নিচু রাস্তা হওয়ায় রাঙ্গামাটি একটি রিক্সা মুক্ত শহর। তাই এই শহরে যাতায়ত করতে হয় লোকাল বেবিটেক্সিতে। পৌরসভা কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ায় অনায়াসে শহরের যেকোন স্থানে যেতে পারেন। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা (২০১২), রিজার্ভ ভাড়া শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ৫০-৮০ টাকা।
(১) পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স, এখানে ১২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ, ভাড়াঃ ১৭২৫ টাকা। ৭টি নন-এসি রুম রয়েছে, প্রতিটির ভাড়া ৮০৫ টাকা, যোগাযোগ ০৩৫১-৬৩১২৬।
(২) হোটেল সুফিয়া, ২৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। ভাড়া ৯০০ টাকা (একক), ১২৫০ (দ্বৈত)। ৩৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে, প্রতিটির ভাড়া ৬০০ টাকা। যোগাযোগ ০৩৫১-৬২১৪৫, ৬১১৭৪, ০১৫৫৩৪০৯১৪৯।
(৩) হোটেল গ্রীন ক্যাসেল, ৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রতিটির ভাড়া ১১৫০ হতে ১৬০০ টাকা। ১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়া ৭৫০ হতে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ ০৩৫১-৭১২১৪, ০১৭২৬-৫১১৫৩২, ০১৮১৫-৪৫৯১৪৬।
পর্যটন মোটেলে রুম ভাড়া প্রতিদিনের জন্য ৬০০-১২০০ টাকা। ফোন ৬৩১২৬। ঢাকা থেকে এ হোটেলেরও বুকিং দিতে পারেন। যোগাযোগ- বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ফোন- ৮১১৭৮৫৫-৯, ৮১১৯১৯২।
কাপ্তাই লেকের ভেতর ছোট দ্বীপের উপর রেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্ট হল টুক টুকি ও প্যাদা টিং টিং। ইচ্ছে করলে এখানে থাকতেও পারেন। জায়গা দুটি হানিমুনের জন্য বেশ জনপ্রিয়। প্যাদা টিং টিং-এর ফোন- ৬২০৮২, রাঙ্গামাটি শহরের এনডব্লিউডি কোড ০৩৫১।
• কচি বাঁশের তরকারী
এটি একটি অসাধারণ আইটেম। স্বাদ অসাধারন! পুঁই বা অন্যান্য শাকের সাথে অথবা এটি ভাজি রান্না করা হয়। এটি খেতে খুবই নরম। আসলে এগুলোর স্বাদ বলে বুঝানো যাবে না! বুঝতে হলে খেতে হবে।
• কেবাং
এটি খাবার রান্নার একটি পদ্ধতি। শক্ত বাঁশ মাঝ খান দিয়ে ফাঁটিয়ে, খোলের ভেতর তেল-মশলাসহ শূকরের মাংস ভরে বাঁশটিকে পোড়ানো হয়। শূকরের পরিবর্তে অন্য মাংস বা মাছ ইত্যাদির কেবাং করে খেতে পারেন। এর স্বাদ এবং অভিজ্ঞতা আপনাকে স্মৃতির পাতা ঘুড়াবে সারাজীবন।
• কাঁচকি ফ্রাই
সাধারণ পদ্ধতিতেই বড় বড় কাচকি মাছ তেলে ভাজা হয়। গরম গরম খেতে ভীষন মজার খাবার এটি। রাঙ্গামাটির অনেক হোটেলেই এই খাবারটি পাবেন।
• দোচুয়ানি
এটিকে স্থানীয় পদ্ধতিতে বানানো এক প্রকারের মদ বলা চলে। বিশেষ ধরনের চালের ভাত এবং পাহাড়ি লতাপাতার মিশ্রণে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বানানো হয় দোচুয়ানি। স্থানীয় ভাবে তৈরি হলেও এটি একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত, সাধারণত ঝাঝালো স্বাদ ও বর্নহীন হয়ে থাকে। আবার কিছু দোচুয়ানি এলাচের সুগদ্ধ যুক্ত হয়। হোটেলের কোন ছেলেকে সামান্য বকশিশ দিলে সেই জোগার করে দেবে পাহাড়ী মদ দোচুয়ানি।
শুভলং-এ ঢোকার আগে পাহাড়ের উপর মনি স্বপন দেওয়ানের হোটেল আছে। ওখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিজস্ব রান্না করা খাবার পাবেন, যেমন- সাবেরাং দিয়ে ভর্তা বা মাংস, বাঁশের চোঙায় রান্না মাংস, বাঁশের কোড়ের তরকারি, কলাপাতায় মোড়া বদাখোলা, তেল-মসলা ছাড়া শাক ও তরকারী, হরিণের মাংস, মূলার কচি ফুল, শামুক কাকড়া, ভুট্টা সেদ্ধ, বিনি চালের ভাত, চিংড়ি শুটকি, নানা রকম কচু, বাঁশের চোঙায় পাতা মোষের দই ইত্যাদি।
কাপ্তাই লেক
বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করা হলে অত্র এলাকার কৃষি জমি, বনভূমি ও জন বসতি সহ পাহাড়ে ঘেরা বিস্তৃর্ণ অঞ্চল পানির নিচে ডুবে গিয়ে এ হ্রদের সৃষ্টি হয়। কৃত্রিম এ হ্রদের আয়তন ২৯২ বর্গমাইল। রাঙামাটি বেড়াতে এলে কমপক্ষে ১ দিন রাখবেন শুধু লেকে নৌভ্রমনের জন্য। হ্রদের মাঝে ছোট ছোট কিছু দ্বীপ রয়েছে যেমন পেদা টিং টিং , টুক টুক, চেং পেং ইত্যাদি। পেদা টিং টিং দ্বীপে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে, এখানে পাবেন উপজাতিয়দের রান্নার স্বাদ, আর পূর্ণিমা রাতে এখানে বসে উপভোগ করতে পারেন কাপ্তাই হ্রদের অসাধারণ রূপ।
টুক টুক এ আছে একটি ইকো পার্ক। নৌ-ভ্রমণের জন্য রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও পর্যটন ঘাটে স্পীডবোট ও নৌযান পাওয়া যায়। ভাড়ার পরিমাণ ঘন্টায় স্পীড বোট ১২০০-১৫০০ টাকা এবং দেশীয় নৌযান ৫০০-৮০০ টাকা। রিজার্ভ বাজার শহীদ মিনার থেকে টুকটুক ইকো ভিলেজ এ নিয়মিত নৌযান যাতায়ত করে, জন প্রতি ভাড়া ২০ টাকা।
কাপ্তাই বাঁধ ও পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র
এই বাঁধের সাথে কাপ্তাই লেকের নিবির সম্পর্ক রয়েছে কারন এর জন্যই লেকেটির সৃষ্টি হয়েছে। লেকের পানি কর্নফুলী নদীতে গমন স্থলে বাধ দিয়ে এই প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। ১৯৬২ সালে স্থাপিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের বৃহত্তম জল বিদ্যুৎ প্রকল্প। এর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।
কাপ্তাই হ্রদের ঝুলন্ত ব্রীজ
কাপ্তাই লেককে ঘিরেই মূলত রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে। এই লেকের উপর দুই টিলার মধ্যবর্তি স্থানে রয়েছে এ ঝুলন্ত সেতু, যা কিনা রাঙ্গামাটির প্রতীক-এ পরিনত হয়েছে। এই ব্রীজ থেকে লেকের অনেকাংশ দেখা যায়। নৌ ভ্রমন সম্ভব না হলে অনেকে এ ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করে। এর পাশেই রয়েছে নৌঘাট। ইচ্ছে করলে এখান থেকে সাম্পান নৌকা ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন সুবলং ঝর্না।
উপজাতীয় যাদুঘর
রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশ পথেই অবস্থিত এই যাদুঘর। এ যাদুঘরে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত আদিবাসীদের অলংকার, পোষাক, প্রাচীন মুদ্রা, বাদ্যযন্ত্র, অস্ত্র, প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ, পুঁতিপত্র, তৈলচিত্র ও উপজাতীয় জীবনধারার বিভিন্ন আলোকচিত্র রয়েছে। যা দেখে জাতিসত্তাসমূহের জীবনাচার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। জাদুঘরটি সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৯.৩০ টা থেকে বিকেল ৪.৩০ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। শনি, রবি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে। জাদুঘরে প্রবেশ মূল্য বড়দের পাঁচ টাকা ও ছোটদের দুই টাকা।
আরও দেখে আসতে পারেন- বর্তমান চাকমা রাজবাড়ি, বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাজবন বিহার, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি।
পাহাড়ি ঝর্ণা সুবলং
রাঙ্গামাটির অন্যতম সুন্দর দর্শনীয় স্থান এটি। রাঙ্গামাটি শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মনোরম ঝর্নাটি। শুভলং যাওয়ার পথটি বেশ চমৎকার। দুপাশে উঁচু পাহাড় তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা কাপ্তাই লেক। সেই লেকে নৌবিহার করে চলার আনন্দই আলাদা। বর্ষা মৌসুমে ঝর্ণার জলধারা প্রানবন্ত হয়ে উঠে, প্রায় ৩০০ ফুট উচু থেকে নীচে আচড়ে পড়ে আর অপূর্ব শব্দ ও দৃশ্যায়নে পর্যটকদের মুগ্ধ করে। ঝর্নার স্রোতের উপর ছোট একটি সেতু করা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। ঝর্নাস্নান শেষে আপনি সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন সুবলং বাজার। হ্রদের তীরে অবস্থিত স্থানীয় এই বাজারে দুপুরের খাবারটি সেরে নিতে পারেন, হ্রদ থেকে ধরা মাছের ঝোল বা স্থানীয় কোন রান্না মন্দ হবে না।
যেভাবে যাবেনঃ রাঙ্গামাটি শহর থেকে ইঞ্জিন বোটে শুভলং যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা। রিজার্ভ বাজার, পর্যটন কমপ্লেক্স বা তবলছড়ি বাজার থেকেও ইঞ্জিন বোট ভাড়া পাওয়া যায়। যাওয়া আসার ভাড়া প্রায় ৭০০- ১৫০০ টাকা লাগবে। প্রতি নৌকায় ১০ থেকে ২০ জন যাওয়া যায়। সম্প্রতি চালু হয়েছে এই পথে আধুনিক জলযান কেয়ারী কর্ণফুলী। এছাড়া রিজার্ভ বাজার হতে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে লোকাল লঞ্চ ছাড়ে। সকালের দিকে যেতে পারলে ফিরতি পথে পেয়ে যাবেন কোন লঞ্চ।
রাঙ্গামাটি যেভাবে যাবেন
ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল ও কমলাপুর থেকে ডলফিন, এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী এই সকল পরিবহনে ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গামাটি আসতে পারেন। রাত ১০ টার দিকে বাস ছাড়লে সকাল বেলা পৌছে যাবেন রাঙ্গামাটি, বাসে ভাড়া ৫০০-১০০০ টাকা। এছাড়া বাস, ট্রেন বা বিমানে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকেও বাসে রাঙ্গামাটি আসতে পারেন। চট্টগ্রাম শহরের সিনেমা প্যালেস ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এ পেয়ে যাবেন রাঙ্গামাটির বাস। এখানে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাবেন রাঙ্গামাটির বাস, এবং ভাড়া ৬৫ টাকা।পাহাড়ি উচু নিচু রাস্তা হওয়ায় রাঙ্গামাটি একটি রিক্সা মুক্ত শহর। তাই এই শহরে যাতায়ত করতে হয় লোকাল বেবিটেক্সিতে। পৌরসভা কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ায় অনায়াসে শহরের যেকোন স্থানে যেতে পারেন। সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা (২০১২), রিজার্ভ ভাড়া শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ৫০-৮০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
এখানে সরকারী বেসরকারী অনেকগুলো হোটেল ও গেষ্ট হাউজ রয়েছে। বাস থেকে নেমে পুরাতন বাস স্ট্যান্ড রিজার্ভ বাজার এলাকাতেই পেয়ে যাবেন অনেক হোটেল। লেকের কাছাকাছি কোন হোটেলে উঠতে পারেন, তাহলে হোটেল থেকে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পেয়ে যাবেন। কিছু হোটেলের তথ্য দেয়া হল-(১) পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স, এখানে ১২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ, ভাড়াঃ ১৭২৫ টাকা। ৭টি নন-এসি রুম রয়েছে, প্রতিটির ভাড়া ৮০৫ টাকা, যোগাযোগ ০৩৫১-৬৩১২৬।
(২) হোটেল সুফিয়া, ২৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। ভাড়া ৯০০ টাকা (একক), ১২৫০ (দ্বৈত)। ৩৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে, প্রতিটির ভাড়া ৬০০ টাকা। যোগাযোগ ০৩৫১-৬২১৪৫, ৬১১৭৪, ০১৫৫৩৪০৯১৪৯।
(৩) হোটেল গ্রীন ক্যাসেল, ৭ টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম রয়েছ। প্রতিটির ভাড়া ১১৫০ হতে ১৬০০ টাকা। ১৬টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রনহীন রুম রয়েছে প্রতিটির ভাড়া ৭৫০ হতে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ ০৩৫১-৭১২১৪, ০১৭২৬-৫১১৫৩২, ০১৮১৫-৪৫৯১৪৬।
পর্যটন মোটেলে রুম ভাড়া প্রতিদিনের জন্য ৬০০-১২০০ টাকা। ফোন ৬৩১২৬। ঢাকা থেকে এ হোটেলেরও বুকিং দিতে পারেন। যোগাযোগ- বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ফোন- ৮১১৭৮৫৫-৯, ৮১১৯১৯২।
কাপ্তাই লেকের ভেতর ছোট দ্বীপের উপর রেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্ট হল টুক টুকি ও প্যাদা টিং টিং। ইচ্ছে করলে এখানে থাকতেও পারেন। জায়গা দুটি হানিমুনের জন্য বেশ জনপ্রিয়। প্যাদা টিং টিং-এর ফোন- ৬২০৮২, রাঙ্গামাটি শহরের এনডব্লিউডি কোড ০৩৫১।
খাওয়া দাওয়া
রাঙ্গামাটির বৈচিত্রময় পরিবেশের সাথে খাবারেরও রয়েছে বিচিত্রতা। সাধারনত হোটেলে আদিবাসী রেসিপির খাবার রান্না হয় না। আপনি যদি কোন আদিবাসী পরিবারের অতিথি হন তাহলে তাদের সুস্বাদু খাবারের স্বাদ পেতে পারেন। তাছাড়া হ্রদের দ্বীপের মাঝে হোটেল পেদা টিং টিং এ কিছু পাহাড়ি খাবারের আইটেম পাবেন। আসুন জেনে নিই কিছু উপজাতিয় রান্না করা খাবারের নাম।• কচি বাঁশের তরকারী
এটি একটি অসাধারণ আইটেম। স্বাদ অসাধারন! পুঁই বা অন্যান্য শাকের সাথে অথবা এটি ভাজি রান্না করা হয়। এটি খেতে খুবই নরম। আসলে এগুলোর স্বাদ বলে বুঝানো যাবে না! বুঝতে হলে খেতে হবে।
• কেবাং
এটি খাবার রান্নার একটি পদ্ধতি। শক্ত বাঁশ মাঝ খান দিয়ে ফাঁটিয়ে, খোলের ভেতর তেল-মশলাসহ শূকরের মাংস ভরে বাঁশটিকে পোড়ানো হয়। শূকরের পরিবর্তে অন্য মাংস বা মাছ ইত্যাদির কেবাং করে খেতে পারেন। এর স্বাদ এবং অভিজ্ঞতা আপনাকে স্মৃতির পাতা ঘুড়াবে সারাজীবন।
• কাঁচকি ফ্রাই
সাধারণ পদ্ধতিতেই বড় বড় কাচকি মাছ তেলে ভাজা হয়। গরম গরম খেতে ভীষন মজার খাবার এটি। রাঙ্গামাটির অনেক হোটেলেই এই খাবারটি পাবেন।
• দোচুয়ানি
এটিকে স্থানীয় পদ্ধতিতে বানানো এক প্রকারের মদ বলা চলে। বিশেষ ধরনের চালের ভাত এবং পাহাড়ি লতাপাতার মিশ্রণে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বানানো হয় দোচুয়ানি। স্থানীয় ভাবে তৈরি হলেও এটি একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত, সাধারণত ঝাঝালো স্বাদ ও বর্নহীন হয়ে থাকে। আবার কিছু দোচুয়ানি এলাচের সুগদ্ধ যুক্ত হয়। হোটেলের কোন ছেলেকে সামান্য বকশিশ দিলে সেই জোগার করে দেবে পাহাড়ী মদ দোচুয়ানি।
শুভলং-এ ঢোকার আগে পাহাড়ের উপর মনি স্বপন দেওয়ানের হোটেল আছে। ওখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিজস্ব রান্না করা খাবার পাবেন, যেমন- সাবেরাং দিয়ে ভর্তা বা মাংস, বাঁশের চোঙায় রান্না মাংস, বাঁশের কোড়ের তরকারি, কলাপাতায় মোড়া বদাখোলা, তেল-মসলা ছাড়া শাক ও তরকারী, হরিণের মাংস, মূলার কচি ফুল, শামুক কাকড়া, ভুট্টা সেদ্ধ, বিনি চালের ভাত, চিংড়ি শুটকি, নানা রকম কচু, বাঁশের চোঙায় পাতা মোষের দই ইত্যাদি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন