সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখবেন যেভাবে

সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলে খুলনা, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালি, বাগেরহাট ও বরগুনা জেলার প্রায় ৬ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনে প্রায় ৪৫০ টি নদ-নদী, ৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ৩০০ প্রজাতির পাখি, ১৩ প্রজাতির অর্কিড ও ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনে প্রায় ৪৭০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ২০০টি কুমির, দেড় লাখ চিত্রল-মায়া হরিণ, ২৫ হাজার বন্য শূকর, ৫০ হাজার বানর ছাড়াও অসংখ্য মাছ, উভয়চর, সরিসৃপ ও পাখী রয়েছে। এটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক স্থান। ধারনা করা হয়, প্রচুর সুন্দরী গাছ থাকায় এই বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন।

বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে পর্যটকের জন্য বনের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৫ কিমি কাঠের পথ তৈরী করা আছে। ইচ্ছে করলে এই পথে হেঁটে বনের ভেতরে ঘুরে দেখতে পারেন।

সুন্দরবনের কয়েকটি জনপ্রিয় পয়েন্ট -

কচিখালিঃ এই এলাকাটি সমুদ্র তীরবর্তী তৃণভূমি জাতীয় বনভূমি। এই বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী নির্ভয়ে বিচরণ করে।

হিরণ পয়েন্টঃ এটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান। নিবির এ বনভূমিতে হয়ত দেখা পেয়ে যেতে পারেন বাঘ, হরিণ, কুমির বা অন্য কোন ব্য প্রানীর।

কটকাঃ একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে এখানে, ইচ্ছে করলে এখানে হেঁটে বেড়াতে পারেন। এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃর্ন অঞ্চল অবলোকন করতে পারবেন।

দুবলার চরঃ এই মনোরম দ্বীপটিতে দেস্খতে পাবেন চিত্রল হরিণের দল। দুবলার মাটি খুঁড়লে মিষ্টি পানি পাওয়া যায়। কার্তিক মাসে এখানে হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান রাসোৎসব হয়ে থাকে, সেসময় মেলা বসে এবং প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।

করমজলঃ এটি মূলতঃ একটি কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এখানে কাঠের তৈরি সুন্দর একটি চলার পথ রয়েছে। এই পথে চলতে চলতে আশে পাশেই দেখতে পাবেন হরিন, বানর সহ অন্যান্য বন্য প্রানীর বিচরন। এখানে একটি ছোট প্রানী যাদুঘরও আছে।

লাউডুবঃ মংলা থেকে নৌপথে প্রায় দুই ঘণ্টার পথ পারী দিয়ে পৌছবেন পশুর নদী, এ নদীর তীরে চাঁদপাই রেঞ্জে অবস্থান লাউডুব। পাখী প্রিয়দের খুব পছন্দের জায়গা এটি। এখানে একটা ছোট খালের দুই পাড়ে স্থানীয় বনবাসীরা বসবাস করে। তারা গভীর বনে যাওয়ার আগে দেব-দেবীর পূজা করে। ডিসেম্বর মাসে ঘটা করে তারা বনদেবীর পূজা দিয়ে থাকে।

সুন্দরবনের আর কিছু পর্যটন স্পট - কালকিনি পিকনিক স্পট, কালীর চর, কনক, তিন কোনা দ্বীপ, জামতলা, মান্দারবাড়িয়া, হারবাড়িয়া, নীলকমল ইত্যাদি।

যেভাবে যেতে হবে
রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনার দুরত্ব ৩৬০ কিমি। বাস, ট্রেন, বিমান ও লঞ্চে ঢাকা থেকে খুলনা যেতে পারেন।

১) বাস - ঢাকার আরামবাগ ও গাবতলী থেকে হানিফ, সোহাগ, ঈগল প্রভৃতি বাস সার্ভিস সমূহ সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তাছাড়া সায়দাবাদ থেকেও বিভিন্ন বাস মংলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
২) ট্রেন - সুন্দরবন ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা থেকে সকাল ৭টায় ও সন্ধ্যা ৭টায় খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
৩) বিমান - ঢাকা থেকে বিমানে যশোর গিয়ে সেখান থেকে লোকাল বাসে খুলনা যেতে পারেন।
৪) লঞ্চ - সদরঘাট থেকে লঞ্চে যেতে পারেন খুলনা। ভাড়া ৩১০-২১০০ টাকা। সাধারনত সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে দূরপাল্লার লঞ্চসমূহ ছেড়ে যায়।

সুন্দরবনের নিকটবর্তী বন্দর মংলা। খুলনা থেকে বাসে যেতে পারেন মংলা ফেরীঘাট। এখানে বন বিভাগ অফিসে ভ্রমন কর পরিশোধ সাপেক্ষে, ভ্রমনের অনুমতি নিয়ে ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া করে প্রবেশ করতে পারেন সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে। এখানে ভ্রমণ পরিচালনাকারী বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। প্যাকেজে এসব সংস্থার লঞ্চ স্টিমারে যেতে পারেন সুন্দরবন। জন প্রতি প্যাকেজে সম্ভাব্য খরচ ৩০০০-৫০০০ টাকা। এসব লঞ্চে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া বন বিভাগের অনুমতি ও ভ্রমনকর এসব প্যাকেজ কোম্পানী পরিশোধ করবে।

খুলনার লঞ্চঘাট থেকেও প্রতি শুক্রবার সকালে সুন্দরবন ভ্রমণের বিভিন্ন ট্যুরিজম কোম্পানীর লঞ্চ ছাড়া হয়। ঢাকা থেকেও ট্যুর অপারেটরের প্যাকেজে সুন্দরবন যেতে পারেন, সেক্ষেত্রে জন প্রতি খরচ পরবে ১০,০০০-১৫০০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন
হিরণ পয়েন্টে মংলা পোর্ট কর্তৃপক্ষের ত্রিতল বিশিষ্ট একটি রেস্টহাউস রয়েছে,অগ্রিম প্রদান সাপেক্ষে খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস থেকে অনুমোদন নিতে পারলে এখানে থাকতে পারেন। এছাড়া মংলা বা খুলনা থাকতে পারেন। তবে প্যাকেজ ভ্রমনে গেলে ট্যুর অপারেটর নিজ দায়িত্বে লঞ্চ বা স্টিমারে থাকা ও খাওয়ার ব্যাবস্থা করে থাকে।

মন্তব্যসমূহ