দিনাজপুর কান্তজীর মন্দির টেরাকোটা শিল্পের নির্দশন

দিনাজপুরে যা যা দেখবেন
কান্তজীর মন্দির, রামসাগর, দিনাজপুর রাজবাড়ি, সীতাকোট বিহার, স্বপ্নপুরী ইত্যাদি।


কান্তজীর মন্দির

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১২ মাইল উত্তরে এবং দিনাজপুর-তেতুঁলিয়া সড়কের প্রায় এক মাইল পশ্চিমে ঢেপা নদীর পারে, কান্তনগরে অবস্থিত এ মন্দির। এ মন্দিরের বিশেষতা হচ্ছে পৌরাণিক কাহিনীসমূহ পোড়ামাটির অলঙ্করণে দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ মন্দির বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নির্দশন। ১৭২২ সালে  দিনাজপুরের তৎকালিন মহারাজ প্রাণনাথ এ মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং তাঁর দত্তকপুত্র মহারাজ রামনাথ ১৬৭৪ সালে মন্দিরটির নির্মাণ সম্পন্ন করেন। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এ নবরত্ন মন্দিরের চুড়া ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

যেভাবে যাবেনঃ দিনাজপুর শহর হতে কান্তজীউ মন্দিরের দুরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। শহর থেকে আপনি বেবি ট্যাক্সি অথবা সিএনজি অটোরিক্সায় চলে যেতে পারেন কান্তজিউ মন্দির। দিনাজপুর থেকে কান্তজীউ মন্দির পর্যন্ত ভাড়া সিএনজি অটোরিক্সা ১০০ – ১৫০ টাকা, রিজার্ভ গাড়ী আসা যাওয়াঃ ৬০০ – ৭০০ টাকা।

রামসাগর

দিনাজপুর শহরের কেন্দ্র থেকে ৮ কিমি দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নে অবস্থিত দিনাজপুরের মহারাজদের অন্যতম কীর্তি রামসাগর দিঘি। দীঘির চারপাশে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ আর নানা পাখির কলরব। সাথেই রয়েছে হরিণের আস্তানা। পাড়ভূমিসহ দিঘির মোট আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার।

সেচ সুবিধা, প্রজাদের পানির কষ্ট দূরীকরনের লক্ষ্যে রাজা রামনাথের আমলে এ দিঘি খনন করা হয়। দিঘিটি খনন করতে তৎকালীন প্রায় ৩০,০০০ টাকা এবং ১৫ লক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল।
কথিত আছে, রাজা রামণাথের আমলে বৃষ্টির অভাবে রাজ্যে খরায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। প্রচুর মানুষ অনাহারে প্রাণ হারায়। রাজা প্রচুর শ্রমিক লাগিয়ে এ দীঘিটি খনন করেন। কিন্তু দীঘিতে কোন জল উঠল না। চরম হতাশায় রাজা যখন চিন্তামগ্ন তখন তিনি স্বপ্নাদেশ পেলেন দীঘিতে যুবরাজ নিজের জীবন বিসর্জন দিলে তবেই এটি পানিতে ভরে উঠবে। স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী যুবরাজ আত্ম বিসর্জন দিতে অবগাহন করলে আশ্চর্যজনকভাবে দীঘি জলে ভরে উঠল । আর তার নাম অনুসারে এ দীঘির নাম রাখা হল রামসাগর।

যেভাবে যাবেনঃ দিনাজপুর শহর হতে রাসাগরের দুরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। শহর থেকে আপনি বেবি ট্যাক্সি অথবা সিএনজি অটোরিক্সা করে চলে যেতে পারেন রামাসাগরে।


সীতাকোট বিহার

এই বিহারকে কেন্দ্র করে নানা গল্প প্রচলিত আছে। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে, সীতা দ্বিতীয়বার বনবাস কালে এ স্থানটিতে বাল্মিকী মুনির আশ্রমে অবস্থান করেছিলেন। স্থানটির নিকটবর্তী বর্তমানে আশুলিয়ার বিলের মাঝখানের এক উঁচু ঢিবিতে তপস্যা করতেন বাল্মীকি মুনি। সেখানে বসেই তিনি সাত কাণ্ডের রামায়ণ রচনা করেছিলেন। স্থানীয়দের মতে, সীতা বনবাস কালে এখানে ছিলেন বলে এ স্থানের নামকরণ হয়েছে সীতাকোট । জনশ্রুতি আছে, কোনো একসময় এখানে একটি হীরার কুঠার পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে এবিষয়ে কোন তথ্যে নেই।
এখানে প্রত্নতত্ত্ব খননের পর এখানে একটি বৌদ্ধ বিহারের অস্থিত্ব পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যেকটি বৌদ্ধ বিহার খনন করে বের করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে সীতাকোট বিহারকে সবচেয়ে প্রাচীন।

যেভাবে যাবেনঃ দিনাজপুর শহর থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলায় যাবেন। সেখান থেকে রিক্সায় যেতে পারবেন সিতাকোট বিহারে। ঢাকা থেকে বাসে গেলে বিরামপুর বা ঘোড়াঘাট নেমে নবাবগঞ্জ যেতে হবে। থানা সদরের একটু পশ্চিমে বিহারটি অবস্থিত।


যেভাবে যাবেন দিনাজপুর
ঢাকার গাবতলী হতে হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহন সহ বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস দিনাজপুর যায়। তাছাড়া ট্রেনেও যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন
দিনাজপুর শহরে বাংলাদেশ পর্যটন কপোর্রেশন এর মোটেল সহ বেশ কয়েকটি ভাল হোটেল রয়েছে। রাম সাগর রেষ্ট হাউজঃ ০৫৩১- ৬৩০৯০, পর্যটন মোটেলঃ ০৫৩১-৬৪৭১৮, হোটেল তিলত্তমাঃ ০৫৩১-৬১২৭৯, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ারঃ ০৫৩১-৬৫৯২০, হোটেল ইউনিকঃ ০৫৩১-৫২২০৩, ০১৭৩৬৩৩৫২৬৪, হোটেল আল রশিদঃ ০৫৩১-৬৫৬৫৮।

হোটেল ভাড়া (২০১৩) পর্যটন মোটেলঃ ৮০০ – ১৫০০ টাকা, হোটেল ডায়মন্ডঃ ৫০০ – ৬০০ টাকা, হোটেল পুর্নভবাঃ ৩০০ – ৫০০ টাকা, হোটেল আল রশিদঃ ৩০০ – ৫০০ টাকা।

মন্তব্যসমূহ