বান্দরবন - আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই

বাংলাদেশের সবচেয়ে উচ্চতাসম্পন্ন পাহাড় আর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক স্বপ্নিল রাজ্য বান্দরবন। এখানকার ঊচ্চতম শৃঙ্গগুলো হচ্ছে- সাকা হাফং বা মওদক টং (১০৬৪ মি), কেওক্রাডং (৯৭৪ মি), তাজিংডং (৮৩০ মি) ইত্যাদি। পার্বত্য জেলার ১৩টি আদিবাসীর প্রায় সবগুলোর জাতিগোষ্ঠি বান্দরবনে বসবাস করে। আদিবাসীগুলো হচ্ছে চাকমা, মারমা, টিপরা, ম্রো, খুমি, লুসাই, বোম, উসুই, পাংখো, তঞ্চ্যঙ্গা, খ্যাং, ওচাক। তবে এখানে মারমা সমপ্রদায়ের লোকসংখ্যাই বেশি।

এখানকার পর্যটন আর্কষনীয় স্থানসমূহ হল- বগা লেক, কেওক্রাডং, জাদিপাই, বাকলাই ঝর্না, রাইখিয়াং, রেমাক্রী, নাফাখুম, ঋজুক জলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, স্বর্ণ মন্দির ইত্যাদি। তাছাড়া অফিসিয়াল টুর বা পিকনিক স্পট হিসেবে বান্দরবনের আশেপাশে প্রান্তিক লেক, মেঘলা, মিরিঞ্জা, উপবন প্রভৃতি পর্যটন কমপ্লেক্স-এ যেতে পারেন। বান্দরবন ভ্রমনের জনপ্রিয় ট্রাকিং পথ সমূহ হল-

বান্দরবান > রুমাবাজার > বগালেক > কেওক্রাডং > জাদিপাই > বাকলাই > তাজিংডং
বান্দরবান > নীলাচল > চিম্বুক > নীলগিরি > থানচি > তিন্দু > রেমাক্রী > নাফাখুম > অমিয়াখুম

কিভাবে যাবেন বান্দরবনঃ
ঢাকার কমলাপুর, ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া, এস আলম, ইউনিক, বিআরটিসি সরাসরি প্রভৃতি বাস সার্ভিসে সরাসরি বান্দরবন যেতে পারেন; ভাড়া ৭৫০ টাকা। ভাড়া নন-এসি ৪৫০ টাকা, এসি ৭৫০ টাকা। তাছাড়া ট্রেনে চট্টগ্রাম গিয়ে তারপর বাসে বান্দরবন যেতে পারেন, বহদ্দারহাট টার্মিনাল থেকে পূরবী এবং পূর্বাণী নামক দুটি বাস সার্ভিস ৩০ মিঃ পর পর বান্দরবনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়; ভাড়া জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকা।

কোথায় থাকবেনঃ
বান্দরবনের অনেক হোটেলের মধ্যে জনপ্রিয় কিছু হোটেলের ঠিকানা -
নীলাচলে থাকার জন্য রয়েছে নীলাচল স্কেপ রিসোর্ট; ৬ কক্ষ বিশিষ্ট এই রিসোর্টে খাবারের ব্যাবস্থাও আছে। যোগাযোগঃ ০১৭ ৭৭৭৬৫৭৮৯, ০১৫ ৫৬৯৮০৪৩২।
বান্দরবনে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল মেঘলা। ভাড়া রুম প্রতি ৭৫০ হতে ২০০০ টাকা। বুকিং ফোন নম্বর: ০৩৬১-৬২৭৪১ এবং ০৩৬১-৬২৭৪২।
হোটেল ফোর স্টারঃ এটি বান্দরবন বাজারে অবস্থিত। বুকিং ফোন:- ০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮ ১৩২৭৮৭৩১, ০১৫ ৫৩৪২১০৮৯।
হোটেল থ্রী স্টারঃ বান্দরবন বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়া হয়। ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট নন এসি ভাড়া পড়বে ২৫০০ টাকা, আর এসি ৩০০০ টাকা। বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে ০১৫ ৫৩৪২১০৮৯।
হোটেল প্লাজা বান্দরবনঃ এটি বাজারের কাছে অবস্থিত। সিঙ্গেল রুম ভাড়া ৪০০ টাকা, ডাবল ৮৫০, এসি ১২০০ টাকা। বুকিং এর জন্য ফোন নং ০৩৬১-৬৩২৫২।
চিম্বুক, নীলগীরি এবং বগা লেকে রেষ্ট হাউজ রিজার্ভেশন-এর জন্য এই নম্বরগুলিতে কন্টাক্ট করতে পারেন-
ক) চিম্বুকঃ ওয়ারেন্ট অফিসার মিঃ আজিজ/সামাদ - ০১৫ ৫৬৭৪৪০৩১
খ) নীলগীরিঃ মেজর ফারুক - ০১৭১ ৬৫৯৮২৬৬, ক্যাপ্টেন নাহিদ-০১৮ ১৯১৮৫০১৫
গ) হিল সাইড রিসোর্টঃ ০১১ ৯৯২৭৫৬৯১
গুরুত্বপূর্ণ কিছু টেলিফোন নম্বরঃ

সদর হাসপাতাল ৬২৫৪৪; পুলিশ সুপার ৬২৫০৫, ৬২৯৭৭ (বাসা- ৬২৩০৯); বান্দরবান প্রেসক্লাব ৬২৫৪৯।

সাথে নিবেনঃ
  • ভ্রমনে আরামদায়ক তেমন 
  • অমিয়াখুম
  • বাংলাদেশে এত সুন্দর জায়গা !!! চারদিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরে পরে যাবেন। হয়ত কেউ কেউ বলবে এখান থেকে আমি আর যাব না, আপনারা চলে যান। আসুন জেনে নিই বান্দরবনের এই অমিয়াখুমে কিভাবে যেতে হবে। অমিয়াখুমের ট্র্যাকিং পথ হবেঃ বান্দরবন - থানচি - রেমাক্রী - নাফাখুম - অমিয়াখুম।

  • বান্দরবন থেকে বাস বা জীপে সোজা চলে যাবেন থানচি। সেখান থেকে একজন গাইড নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে রিপোর্ট করবেন এবং নৌকা ভাড়া করে চলে যাবেন রেমাক্রি। এরপর আর কোনো গাড়ি বা নৌকা যাবে না, বাহন তো দুরের কথা পায়ে চলার রাস্তা পেতেই কষ্ট হবে। পাহাড়ি ঝিড়ি পথে পায়ে হেটে আপনাকে পৌছতে হবে অমিয়াখুম। চলতি পথে পড়বে নাফাখুম, তারপর জিনাপাড়া; এখানে রাত্রি যাপন করে পরদিন ভোরে অমিয়াখুমের পথে হাঁটা দেবেন। সঙ্গে করে রশি, লাইফ জ্যাকেট আর খাবার নিয়ে যাবেন। চলার পথে হয়ত মনে মনে বলবেন কার কথা শুনে যে আমি বান্দরবন এসেছিলাম ! কিন্তু পৌছানোর পর বলবেন, আরো আগে কেন আসিনি ? আমি আবার আসব ! ভুলে যাবেন সকল কষ্ট। মনে হবে এমন সুন্দর জায়গায় আসতে হলে এতটুক কষ্ট স্বীকার করে যাওয়াই উচিত, তা না হলে ভাল জিনিসের মর্যাদা কোথায় ? থাকা খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, এব্যাপারে গাইড আপনাদের সাহায্য করবে। যেহেতু এটি দুর্গম এলাকা, কোন হোটেল রেস্টুরেন্ট নাই, তাই রাত্রি যাপন করতে হবে আদিবাসী কোন পল্লীতে, খেতে হবে ওদের রান্নাকরা খাবার। ফিরে আসার পথে পদ্মমুখ হয়ে আসতে পারেন, সে ক্ষেত্রে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা হেঁটে অনেক আগেই আপনি থানচিতে পৌঁছাতে পারবেন। অমিয়াখুম ও সাতভাইখুম ভালোভাবে ঘুরে আসতে চার দিন লেগে যাবে। এসব ভ্রমনে ব্যাগ ভারী না করাই ভাল।
  • অল্প পরিমানে কাপড় চোপড় যেমন- টি-শার্ট, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, তিনদিকে সেলাই করা বিছানার চাদর
  • প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন- টুথ ব্রাশ, টুথ পেস্ট, কলম, ওডোমস বা এ জাতিয় মশা প্রতিরোধক ক্রিম, সান গ্লাস, হেড ক্যাপ, চার্জার, ক্যামেরা, এক্সট্রা ব্যাটারী হাটার জন্য ভাল গ্রিপের প্লাষ্টিকের স্যান্ডেল, দুজোড়া মোজা
  • প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র যেমন প্যারাসিটেমল, এন্টিসেপ্টিক মলম, খাবার স্যালাইন
  • প্রত্যেক টুরিষ্টের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, বাসার ফোন, পেশা ইত্যাদি লিখিত কমপক্ষে ১০ টি ফটোকপি শুকনো খাবার ও পানি
অবশ্য পালনীয়

ভাল গ্রিপের জুতা বা কেডস পড়তে হবে। ঝিরি পথ পাড়ি দিতে চাইলে প্লাষ্টিকের গ্রিপওয়ালা স্যান্ডেল পড়তে হবে
পাহাড়ে সবসময় আইন মেনে চলবেন, কখনও পাহাড়ি কালচারের প্রতি অসম্মানজনক কোনো আচরণ বা মন্তব্য করবেন না
বন্য জীবজন্তু বা পরিবেশের ক্ষতি করবেন না
পাহাড়িদের বিশেষ করে মেয়েদের বিনা অনুমতিতে ছবি নেবেন না
কোনো অবস্থাতেই গাইড ছাড়া একা কোথাও যাবে না
ঝিরি পথে হেটে যাবার জন্য সঙ্গে উপযুক্ত পরিমান খাবার নিয়ে নিতে হবে
যাত্রার আগে ম্যালেরিয়া-এর প্রিভেনটিভ ওষুধ খেয়ে নেয়া জরুরী।


বান্দবনের বেশ কিছু জনপ্রিয় পর্যটন স্পট -


অমিয়াখুম

বাংলাদেশে এত সুন্দর জায়গা !!! চারদিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরে পরে যাবেন। হয়ত কেউ কেউ বলবে এখান থেকে আমি আর যাব না, আপনারা চলে যান। আসুন জেনে নিই বান্দরবনের এই অমিয়াখুমে কিভাবে যেতে হবে। অমিয়াখুমের ট্র্যাকিং পথ হবেঃ বান্দরবন - থানচি - রেমাক্রী - নাফাখুম - অমিয়াখুম।

বান্দরবন থেকে বাস বা জীপে সোজা চলে যাবেন থানচি। সেখান থেকে একজন গাইড নিয়ে বিজিবি ক্যাম্পে রিপোর্ট করবেন এবং নৌকা ভাড়া করে চলে যাবেন রেমাক্রি। এরপর আর কোনো গাড়ি বা নৌকা যাবে না, বাহন তো দুরের কথা পায়ে চলার রাস্তা পেতেই কষ্ট হবে। পাহাড়ি ঝিড়ি পথে পায়ে হেটে আপনাকে পৌছতে হবে অমিয়াখুম। চলতি পথে পড়বে নাফাখুম, তারপর জিনাপাড়া; এখানে রাত্রি যাপন করে পরদিন ভোরে অমিয়াখুমের পথে হাঁটা দেবেন। সঙ্গে করে রশি, লাইফ জ্যাকেট আর খাবার নিয়ে যাবেন। চলার পথে হয়ত মনে মনে বলবেন কার কথা শুনে যে আমি বান্দরবন এসেছিলাম ! কিন্তু পৌছানোর পর বলবেন, আরো আগে কেন আসিনি ? আমি আবার আসব ! ভুলে যাবেন সকল কষ্ট। মনে হবে এমন সুন্দর জায়গায় আসতে হলে এতটুক কষ্ট স্বীকার করে যাওয়াই উচিত, তা না হলে ভাল জিনিসের মর্যাদা কোথায় ? থাকা খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, এব্যাপারে গাইড আপনাদের সাহায্য করবে। যেহেতু এটি দুর্গম এলাকা, কোন হোটেল রেস্টুরেন্ট নাই, তাই রাত্রি যাপন করতে হবে আদিবাসী কোন পল্লীতে, খেতে হবে ওদের রান্নাকরা খাবার। ফিরে আসার পথে পদ্মমুখ হয়ে আসতে পারেন, সে ক্ষেত্রে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা হেঁটে অনেক আগেই আপনি থানচিতে পৌঁছাতে পারবেন। অমিয়াখুম ও সাতভাইখুম ভালোভাবে ঘুরে আসতে চার দিন লেগে যাবে। এসব ভ্রমনে ব্যাগ ভারী না করাই ভাল।


রাইখং, পুকুরপাড়া

যারা এডভেঞ্চার পছন্দ করেন, উচু নিচু দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা-খাল অতিক্রম করার মত শারীরিক ও মানসিক সামর্থের অধিকারী তারাই কেবল রাইখং যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন। রাইখং, পুকুরপাড়া এই অঞ্চলটি যদিও রাঙামাটি জেলার অন্তর্গত কিন্তু বান্দরবন হয়ে আসা যাওয়া আসাই অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক। বগালেক থেকে ১০-১২ কি.মি. পুর্বে দুর্গম পাহারী পথে কখনও ঝিরি, কখনও খাল, কখনও পাহাড় পেড়িয়ে যেতে হবে রাইখং। বগালেক থেকে পায়ে হেটে ১০ ঘন্টার পথ।

রাইখং পৌছার পর প্রথমে পরবে পুকুরপাড়া, আদিবাসীদের গ্রাম। তারপর রাইখং লেক, বড়ই মনোরম সে দৃশ্য, লেকের স্বচ্ছ জল ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করবে। পূর্ব দিকে একটু এগিয়ে গেলে সামনে পড়বে রাইখং খাল; অপরূপ জলপ্রপাত, এখানে আসার পর এত দুর্গম পথ চলার কষ্ট আপনি ভুলে যাবেন। এখান থেকে দৃষ্টি সরাতে পারবেন না, নিজেও অজান্তেই আপনার মুখ থেকে একটা শব্দ বেড়িয়ে যাবে, ও -য়া -ও। উজানে কিছুদুর এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে নয়নাবিরাম ঝর্নাধারা; এক কথায় যাকে বলা চলে মাইন্ড ব্লোয়িং। আপনার মনে হবে এটিও কি বাংলাদেশ !!!

রাইখং পল্লীতে রাত্রি যাপন করে পরদিন সকাল বেলা রওনা দিতে পারেন বান্দরবনের উদ্দেশ্যে। রাইখং এর দৃশ্য রয়ে যাবে আপনার স্মৃতি জুড়ে, আসার সময় আপনার মনে হবে আমি আবার আসব। মনে পরবে রবি ঠাকুরের সেই কবিতাখানি -

“ঘর থেকে দু’পা ফেলিয়া, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু...”

যেভাবে যাবেন

বান্দবন থেকে রুমাবাজার। রুমাবাজার থেকে গাইড নিবেন তারপর চান্দের গাড়িতে যাবেন বগালেক। বগালেক থেকে পায়ে হেটে রাইখং। কোথায় থাকবেন খাবেন সে ব্যাপারে গাইড আপনাদের সাহায্য করবে।


বাকলাই ঝর্না

চমৎকার এই ঝর্নাটি বান্দরবন জেলার থানচি উপজেলার নাইটিং মৌজার বাকলাইপাড়ায় অবস্থিত। আসলে এই ঝর্ণার নামেই এলাকার নাম বাকলাইপাড়া হয়েছে। আসুন জেনে নিই কিভাবে যেতে হবে বাকলাই। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবন তারপর চান্দের গাড়ি অথবা লোকাল বাসে রুমাবাজার। রুমাবাজার থেকে গাইড নিতে হবে। গাইডকে দিনপ্রতি ৫০০ টাকা দিতে হবে। রুমাবাজার থেকে চান্দের গাড়িতে যাবেন বগা লেক। এখান থেকে বাকি পথ পায়ে হেটে যেতে হবে। বগা লেক থেকে কেওক্রাডং, সময় লাগবে ২.৩০/৩ ঘন্টা। কেওক্রাডং থেকে দেড় ঘন্টা হেটে পৌছবেন জাদিপাই ঝর্না। রাতে জাদিপাইপাড়া অথবা পাসিংপাড়ায় থাকতে পারেন, এখানে খরচ প্রতিজনে ১০০ টাকার মতো। সেখান থেকে আবার আগের পথ ধরে হেটে যেতে হবে বাকলাই। ইচ্ছে করলে রাতে বাকলাইপাড়া থাকতে পাড়েন, এখানেও ১০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
ফেরার সময় দেশের সর্বোচ্চতম শৃঙ্গ তাজিংডং ভ্রমন করে আসতে পারেন। একই পথে ফিরে আসতে পারেন অথবা থানচি হয়ে বান্দরবান শহর ফিরে আসতে পারেন।

এক নজরে ট্রাকিং ওয়েঃ বান্দরবন > রুমাবাজার > বগা লেক > কেওক্রাডং > পাসিং পাড়া > জাদিপাই পাড়া > বাকলাই > তাজিংডং > থানচি > নীলগিরি > বান্দরবন।


কেওক্রাডং
এটি দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা প্রায় ৩২০০ ফুট। এটিও রুমা উপজেলায় অবস্থিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সৌজন্যে রুমা সদর থেকে কেওক্রাডং থেকে বগালেক পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মিত হয়েছে। ফলে গাড়িতে বগালেক গিয়ে তারপর পায়ে হেটে এ পাহাড়ে যাওয়া যায়। বগা লেক থেকে সময় লাগবে ৩ -৫ ঘন্টা। কেওক্রাডং এর নিকটবর্তী গ্রাম দার্জিলং পাড়া, দুপরের খাবার এখান থেকে খেয়ে বিশ্রাম করে নিতে পারেন, ইচ্ছে করলে রাতেও এখানে থাকতে পারেন। দূর্গম পাহাড়ী বনাঞ্চলে দৃশ্য আর উপজাতিয় কালচারের এ ভ্রমন আপনাকে দিবে অসাধারন অভিজ্ঞতা।

যেভাবে যাবেন

বান্দরবন থেকে চান্দের গাড়িতে যাবেন রুমাবাজার। রুমাবাজার থেকে গাইড নিবেন, আবার চান্দের গাড়িতে চলে যাবেন বগালেক। বগালেক থেকে পায়ে হেটে যাবেন কেওক্রাডং। কোথায় থাকবেন খাবেন সে ব্যাপারে গাইড সাহায্য করবে। কেওক্রাডং এ ঘর ভাড়া পাওয়া যায়, ইচ্ছে করলে এখানেও থাকতে পারেন।


জাদিপাই জলপ্রপাত

বান্দরবনের কেওক্রাডংয়ের খুব কাছের জনবসতি পাসিং পাড়া। প্রায় ৩০৬৫ ফুট উচ্চতায় পাহারের উপর এই আদিবাসী পল্লী। বাংলাদেশের অন্য কোন পাহাড়ে এত উঁচুতে কোন জনবসতি নেই। প্রায় সারা বছরই মেঘের ভেতরে থাকে এই এখানকার লোকজন। পাসিং পাড়া থেকে নিচের দিকে নেমে গেলে জাদিপাই পাড়া। এখান থেকে ঘন্টা খানেক নিচের দিকে হেটে গেলে পাওয়া যাবে অবর্ননীয় সুন্দর জাদিপাই জলপ্রপাত। আর পাহাড় চুয়ে নামা পানি নামার পথকে বিপদজনকভাবে পিচ্ছিল করে রেখেছে। তীব্র গতিতে উচু পাহাড় থেকে ঝরে পড়ছে পানির ঢল। উচ্ছলা পাহাড়ী বালিকার মত, বড় ছোট পাথরের ভেতর দিয়ে কল কল করে নাচতে নাচতে ছুটে যাচ্ছে ঝর্নার জল। পরন্ত জল পাথরের গায়ে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ধুয়াশার সৃষ্টি করে। অপূর্ব সে দৃশ্য।

যেভাবে যেতে হবে
বগালেক হতে কেওক্রাডং তারপর পাসিংপাড়া হয়ে যাবেন জাদিপাই পাড়া। জাদিপাই পাড়া হতে আবার নিচের দিকে নেমে গেলে পেয়ে যাবেন জাদিপাই জলপ্রপাত।

কোথায় থাকবেন
কেওক্রাডং এর পাশে কিছু ঘর তুলে হোটেলের মত থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। খাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। ফোনঃ ০১৫৫৬৫৭৩৭৬৮।


তাজিংডং

স্থানীয় উপজাতীয়দের ভাষায় ‘তাজিং’ শব্দের অর্থ বড় আর ‘ডং’ শব্দের অর্থ পাহাড় যা একত্রিত করলে হয় তাজিংডং। এটি দেশের সর্বোচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এ পর্বতের উচ্চতা প্রায় ৩৪০০ ফুট। এটি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে অবস্থিত। রুমা উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পর্বতের অবস্থান।


যেভাবে যাবেন
থানচি থেকে নৌকায় তিন্দু, তারপর পায়ে হেটে ঝিরি পথে তাজিনডং যেতে হয়। তিন্দু থেকে পাহাড়ী দুর্গম পথে দুরত্ব প্রায় ২০ কি.মি.।

বান্দবন > থানচি > তিন্দু (পদ্মা ঝিরি থেকে হাতের বামে বা পূর্ব দিকের পথ ধরে পায়ে হেটে) > অমি পাড়া > নেতেন > আব্রু হেডম্যান পাড়া > নতুন মেথুন পাড়া > বর্ডিং পাড়া > শেখর পাড়া > তাজিংডং।

তাছারা বগালেক থেকে পাহাড়ী পথে হেটে কেওক্রাডং হয়ে তাজিংডং যাওয়া যায়। সময় লাগবে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা। কোথায় থাকবেন খাবেন সে ব্যাপারে গাইড আপনাদের সাহায্য করবে। ট্র্যাকিং পথঃ বান্দরবন > রুমা > বগালেক > হারমুনপাড়া > দার্জিলিং পাড়া > কেওক্রাডং > পাসিং পাড়া > বাকলাই পাড়া > তাজিংডং ।


ঋজুক ঝর্না

বান্দরবন জেলার রুমা বাজার থেকে নদীপথে থানছি যাওয়ার পথে পড়বে ঋজুক ঝর্না। রুমা বাজার থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার এবং বান্দরবন সদর হতে ৬৬ কিঃমিঃ। সাঙ্গু নদীর পাড়ে প্রায় ৩০০ ফুট উচু থেকে সারা বছরই এ জলপ্রপাতটির রিমঝিম শব্দে পানি পড়ে। এই জলপ্রপাতে সারা বছর পানি থাকে। তবে বর্ষার সময় ঋজুক সাঙ্গুর বুকে এত বেশি পানি ঢালে যে প্রবল স্রোতের তোড়ে জলপ্রপাতের ধারে পৌঁছতে বড় ইঞ্জিনের নৌকাগুলোরও বেশ বেগ পেতে হয়। তবে শুকনো সময়েও বেশ ভালো পরিমাণেই যৌবন থাকে তার। জলপ্রপাতের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই বর্ষার ফলার মতো শরীরে এসে বিঁধে ঠান্ডা পানির ফলা। যেখান থেকে নামছে পানির ধারা, সেখানে পাহাড়ের গায়ে গভীর হয়ে জন্মেছে গাছপালা। সবুজের আস্তর যেন চারিপাশে যা এই ঝর্নাকে দিয়ে ভিন্ন মাত্রা।
সাঙ্গুতে পানি একবারেই কম। পানির নিচের বালি দেখা যায় পরিষ্কার। ঋজুকের উল্টো পাশে নতুন ঋজুকপাড়া নামে মারমাদের একটা পাড়া আছে। আর এ পাশে পাহাড়ের ওপর বমদের যে পাড়াটি এর নামও ঋজুকপাড়া। সময় করে ঋজুক দেখার সাথে সাথে এসব আদিবাসীদের জীবনধারাও অবলোকন করে আসতে পারেন। আতিথেয়তা আর আন্তরিকতার দিক থেকে বম বা মারমারা অতুলনীয়।

যেভাবে যেতে হবে
ঋজুক দেখতে চাইলে বান্দরবান থেকে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে রুমায়। গ্রুপে লোক সংখ্যা বেশি থাকলে বান্দরবন থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে চলে আসতে পারেন রুমা। সাঙ্গু নদীর রুমাবাজার এলাকা থেকে নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। যাওয়া আসা ভাড়া প্রায় ৫০০ টাকা। সাথে খাবার পানি নিয়ে নিবেন। কেউ যদি পায়ে হেঁটে যেতে চান তবে খুব সকালে উঠে রওনা দিতে হবে।

কোথায় থাকবেন
রুমায় রাত্রিযাপনের জন্য উঠতে পারেন হোটেল হিলটনে।


স্বর্ণ মন্দির

বান্দরবন শহর থেকে ১০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে বালাঘাটা এলাকার পুরপাড়া নামক স্থানে সুউচ্চ পাহাড়ের চূঁড়ায় এ বৌদ্ধ মন্দিরটি অবস্থিত। সোনালী রং এর সুন্দর কারুকার্য মন্ডিত মন্দিরটি দেখতে স্বর্নের মত। মন্দিরের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠে চীন, জাপান, মায়ানমার সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শৈলীতে সৃষ্ট বুদ্ধের ১২টি ভাষ্কর্য স্থাপিত আছে। মন্দিরটিতে একটি প্রার্থনালয় ও একটি বৌদ্ধ মিউজিয়াম আছে। মন্দিরের সন্নিকটে পাহাড়ের উপরেই রয়েছে একটি পুকুর, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা পুকুরটিকে পবিত্রতার চোখে দেখে। মন্দিরটি সকাল ৮.৩০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মোক্ত থাকে, বেলা ১১.৩০টা থেকে ১২.৪৫ পর্যন্ত প্রবেশ বিরতি থাকে। ১০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিয়ে, পাদুকা রেখে প্রবেশ করতে হয়।

বান্দরবন শহর হতে রিক্সা, অটোরিক্সা, চান্দেরগাড়ী বা জীপে করে সহজেই এখানে যেতে পারেন, সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট।


শৈলপ্রপাত

স্বচ্ছ জলধারা অবিরত শৈল পাথরকে স্নান করিয়ে আঁকা-বাকা পথে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে পাহাড়ী সরুপথে। ঝর্নার কুলকুল ধ্বনি আর নিঝুম প্রাকৃতিক পরিবেশে পাখির কলতান আপনার মনকে প্রকৃতির সাথে ঐক্যতানের সৃষ্টি করবে। এমনি একটি সরু ঝর্ণাধারার সঙ্গে সময় কাটাতে চাইলে চলে আসুন বান্দরবনের শৈলপ্রপাতে। বান্দরবন শহর থেকে চিম্বুক বা নীলগিরি যাওয়ার পথে প্রায় ৮ কিমি দক্ষিনে অবস্থিত এ আকর্ষনীয় স্থানটি। নিকটেই রয়েছে আদিবাসী বমদের পল্লী। খাওয়া ও রান্না বান্নার কাজে তারা এই ঝর্ণার জল ব্যবহার করে। এখানে উপজাতি তরুণীরা হাতের তৈরী বস্ত্র ও নানান প্রকার তৈজস পত্র বিক্রয় করে থাকেন। শহর থেকে অটো রিক্সা ভাড়া করে চলে আসতে পারেন এই শৈলপ্রপাত দেখতে। এখানে থেকে চলে যাওয়ার পরও স্মৃতিতে থেকে যাবে সেই কুলকুল ধ্বনি, আর সেই নির্মল প্রকৃতি আপনাকে বারবার কাছে টানবে।



চিম্বুক পাহাড়

নীলগিরি যাওয়ার পথে রাস্তার পশ্চিম পাশে বান্দরবন জেলা শহর থেকে ২৬ কিমি দূরে এই পাহাড় রাজ্যের অবস্থান। এখানে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত রাস্তা করা আছে, গাড়িতে আপনি উঠে যেতে পারবেন সমুদ্র পৃষ্ট হতে প্রায় ২৩০০ ফুট উপরে। এখান থেকে বঙ্গোপসাগর দেখা যায়। প্রায়ই নাটক ও বিজ্ঞাপন চিত্রের স্যুটিং হয় এস্থানটিতে। চিম্বুকের চূড়া থেকে যেদিকে তাকাবেন দেখতে পাবেন শুধু সবুজ বনানীর পাহাড়। আরো দেখবেন সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে প্রবাহিত হওয়া সঙ্খ (সাঙ্গু) নদী। আকাশে মেঘ থাকলে আপনি ছুয়েও দেখতে পারবেন মেঘের দলকে।

এখানে সড়ক বিভাগের একটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের একটি অত্যাধুনিক রেষ্ট হাউজ আছে। বান্দরবন শহর থেকে চান্দেরগাড়ী কিংবা জীপগাড়ী করে যাওয়া যায় চিম্বুকে। চাঁদের গাড়ীতে চিম্বুক যেতে খরচ পরবে ১৫০০-২০০০ টাকা, জীপে ২০০০-২৫০০ টাকা। হাতে সময় বেশি না থাকলে নীলগিরি বা থানচি আসা যাওয়ার পথেও চিম্বুক দেখে নিতে পারেন।


নীলাচল

নীলাচল বান্দরবন শহর হতে ৪কি:মি: দক্ষিণে টাইগার পাড়া এলাকায় ১৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত একটি পর্বত শীর্ষ। এখানে এলে দেখতে পাবেন পাহাড়ের নিচে মেঘের মেলা। সাদা দুয়াশা মেঘের বিছানায় পাহাড়গুলো যেন বসে আছে। স্বপ্নময় সেই দৃশ্য সাড়া জীবন রয়ে যাবে আপনার স্মৃতির পাতায়।

যেভাবে যেতে হবে
বান্দরবন শহর হতে চান্দের গাড়ি বা বেবি টেক্সি ভাড়া করে এখানে আসতে পারেন। সময় লাগবে মাত্র ১৫ মিনিট। চান্দের গাড়িতে আসা যাওয়ার ভাড়া লাগবে ৫০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন
নীলাচলে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। চাইলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এখানে থাকতে পারেন। পিকনিক স্পট বা রেস্ট হাউজ বুকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন - ০৩৬১-৬২৬০৫, ০১৭১৪২৩০৩৫৪, ০১৭১২৭১৮০৫১। যেহেতু এটি বান্দরবন শহরের কাছেই অবস্থিত তাই শহরের যে কোন হোটেলেই থাকতে পারেন।



নীলগিরি

সমুদ্র সমতল হতে ২২০০ ফুট উপরে আকাশের কোল ঘেষে এ যেন একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বপ্নরাজ্য। চঞ্চলা মেঘবালিকা পরশ বুলিয়ে যায় এই পাহাড়ের গায়ে। আপনাকে ছুয়ে মেঘ কন্যারা নৃত্য করতে করতে উড়ে চলে যাবে। সে এক রোমাঞ্চকর অনুভুতি। আপনার মনে হবে কোন স্বপ্নময় জগতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

বান্দরবন শহর থেকে মাত্র ৫২ কিলোমিটার দূরে এও অবস্থান। এখানে যাবার জন্য ভাল বাহন হলো চান্দেরগাড়ী। যাওয়া আসা ভাড়া পরবে ২০০০-২৫০০ টাকা। আলীকদম হতে থানচী গামী রাস্তা ধরে দক্ষিন দিকে প্রায় দেড়-দুই ঘন্টা চললে পৌছে যাবেন নীলগিরি।

রাত্রি যাপন
আপনি চাইলে এখানে থাকতে পারেন। তবে তার আগে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে থাকার অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হবে। মেজর ফারুক-০১৭১৬৫৯৮২৬৬, ক্যাপ্টেন নাহিদ-০১৮১৯১৮৫০১৫।

খাবার
এখানে থাকার পাশাপাশি খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এখানে তৈরি হয় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। বাশেঁর খোলে পানিবহীন ভাত ও মাংস আপনার নিশ্চই উপভোগ্য হবে। খাবার খরচ একটু বেশী, ২০০-৫০০ টাকা পড়বে জনপ্রতি।

মন্তব্যসমূহ