লাউয়াছড়ার বুনো ঝর্ণা হামহাম বা হাম্মাম

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্ট,  এ বনভূমির দুর্গম পাহাড়ী এলাকার গভীর অরন্যে রয়েছে অপূর্ব এই জলপ্রপাত। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকট এটি হামহাম বা হাম্মাম ঝর্না নামে পরিচিত।

এই ঝর্নায় যাওয়ার ভাল কোন রাস্তা নেই, অরন্য ঘেরা উচু নিচু বুনো পথে কাদা পানি পেরিয়ে পৌছতে হয় এখানে। সুতরাং এডভেঞ্চার প্রিয়, কষ্ট সহিষ্ণু ও দৃঢ় মনোবলের অধীকারী পর্যটকরাই কেবল এই ঝর্নার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

কিভাবে যাবেন
শ্রীমঙ্গল কিংবা মৌলভীবাজার থেকে বাসে কমলগঞ্জ, সেখান থেকে অন্য বাসে আদমপুর বাজার; তারপর সিএনজিতে আদিবাসী পল্লী তৈলংবাড়ী কিংবা কলাবন বস্তি। কমলগঞ্জ থেকে সিএনজি বা জিপ রিজার্ভ করেও যেতে পারেন কলাবনপাড়া। তারপর আর যান বাহনের রাস্তা নাই, সেখান থেকে জংলা পথে পায়ে হেটে যেতে হবে। অরন্যে প্রবেশের পূর্বে অবশ্যই আদিবাসী পল্লী থেকে একজন গাইড ও একটি বাশেঁর লাঠি সাথে নিয়ে যাবেন। পাহাড়ি বনের পথে লাঠিতে ভর করে হাটতে সুবিধা হবে। বুনো আঁকাবাঁকা ঝিরি পথে কখনো পিচ্ছিল, কখনো উচু নিচু পাথুরে পথ, কখনো ছড়ার জল পাড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রায় ৮ কিমি পথ অতিক্রম করে পৌছবেন কাঙ্খিত সেই হামহাম জলপ্রপাত।

জঙ্গলে বিভিন্ন পশু পাখীর ডাকাডাকির সাথে ঝর্নার জলের শব্দ মিলে তৈরি করে রোমাঞ্চকর এক পরিবেশ, ভুলে যাবেন কোথায় আছেন। চারিদিকে সবুজ বনানী, পায়ের নিচে ঝিরির স্বচ্ছ জল আর সম্মুখে অপরূপ ঝর্না; আপনার মনে হবে হলিঊডের কোন ছিনেমার দৃশ্যে আছেন। সবকিছুর মধ্যে কেবল আকাশটাই পরিচিত মনে হবে।

প্রস্তুতি
থ্রিকোয়াটার টাইপের প্যান্ট, টিশার্ট, পায়ে গ্রিপের প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পরে নিবেন। পায়ে সরিষার তেল মেখে সাথে লবণ নিয়ে নিবেন । জোকে ধরলে আতঙ্কিত না হয়ে এর মধ্যে লবন দিয়ে কোন কিছু দিয়ে ফেলে দিবেন। দুপুরে খাওয়ার জন্য হালকা শুকনা খাবার নিতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ডেটল, নাপা, তুলা এগুলো নিয়ে নিতে পারেন।

কোথায় থাকবেন 
শ্রীমঙ্গলের কোন হোটেলে ওঠাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ঝর্না দেখে ফেরার পথে আপনি এতই ক্লান্ত থাকবেন যে ঐ মুহুর্তে আর শ্রীমঙ্গল ফিরতে ইচ্ছে করবে না কিংবা ফেরার হয়তো উপায়ও থাকবে না। তখন কলাবন আদিবাসী পল্লীতে থাকতে পারেন, এ ব্যপারে গাইড আপনাকে সহায়তা করবে। আদিবাসীরা খুব অতিথি পরায়ন সুতরাং কোন অসুবিধা হবে না। তাছাড়া অরন্যে উপজাতিয় বাড়িতে এমন একটি রাত্রিযাপন হয়তো আপনার জীবনে স্মৃতিময় হয়ে থাকবে।

খরচ 
কমলগঞ্জ থেকে আদমপুর বাজার পর্যন্ত বাস ভাড়া ১০ টাকা। আদমপুর থেকে কলাবন বস্তী সিএনজি ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। গাইড খরচ প্রতিদিন ২০০-৪০০ টাকা।

মন্তব্যসমূহ