পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ভ্রমন

যেভাবে যেতে হবে 
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রতিদিন খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সার্ভিসের আরামদায়ক বাস ছাড়ে। সায়দাবাদ, কমলাপুর, গাবতলী, ফকিরাপুল, কলাবাগান ও টিটি পাড়া থেকে এস আলম, স্টার লাইন, শ্যামলী, সৌদিয়া প্রভৃতি এক্সপ্রেসযোগে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ২৭০ কি মি, সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা, বাস ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন 
এখানে থাকার জন্য ভাল মানে অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। খাগড়াছড়ির প্রধান বাজারে রয়েছে হোটেল মাসুদ, আদালত রোডে চৌধুরী বোর্ডিং, কোর্ট রোডে শিল্পী বোর্ডিং, নারায়ণ রোডে হোটেল থ্রিস্টার, এছাড়া এখানে একটি পর্যটনের মোটেলও রয়েছে। হোটেল ভাড়া ২০০-১৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। খাগড়াছড়ির কয়েটি হোটেলের ফোন নম্বর- পর্যটন মোটেলঃ ০৩৭১-৬২০৮৪ ও ৬২০৮৫, হোটেল শৈল সুবর্ণঃ ০৩৭১-৬১৪৩৬, থ্রি ষ্টারঃ ০৩৭১-৬২০৫৭, ফোর ষ্টারঃ ০৩৭১-৬২২৪০, চৌধুরী বাডিং ০৩৭১-৬১১৭৬, হোটেল নিলয়ঃ ০১৫৫৬-৭৭২২০৬, উপহারঃ ০৩৭১-৬১৯৮০।

খাগড়াছড়ি যা যা দেখবেন

আলুটিলা, আলুটিলার ঝর্ণা, আলুটিলা রহস্যময় সুগঙ্গ, তৈদুছড়া, দেবতার পুকুর, মহালছড়ি হ্রদ, রিছাং ঝর্না, ভগবান টিলা, দুই টিলা ও তিন টিলা, মানিকছড়ি মং রাজবাড়ি, বন ভান্তের প্রথম সাধনাস্থল, রামগড় লেক ও চা বাগান, শতায়ুবর্ষী বটগাছ, পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি।

পরামর্শ
পাহাড়ি পথে ভ্রমনের সময় যথেষ্ট পরিমান খাদ্য ও পানীয় নিতে নিবেন, হালকা ব্যাগ নিবেন, গাইড নিয়ে স্পটে যাবেন, মোবাইল ও ক্যামেরার জন্য জলনিরোধ ব্যাগ নিবেন, স্যালাইন ও প্যারাসিটামল জাতিয় ঔষধ নিয়ে যাবেন, থ্রি কোইয়ার্টার প্যান্ট ও ভাল গ্রিপওয়ালা প্লাষ্টিকের স্যান্ডেল পড়ে যাবেন।

আলুটিলা সুরঙ্গ বা দেবতার গুহা

খাগড়াছড়ি শহর হতে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা পাহাড়ে রয়েছে এই রহস্যময় গুহা। স্থানীয়ভাবে এটি মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা নামে পরিচিত, এর পূর্ব নাম ছিল আরবারী পর্বত। আলুটিলার উচ্চতা সমুদ্র সমতল হতে প্রায় ৩০০০ ফুট, আর সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮২ ফুট।

আলুটিলা সুরঙ্গে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে পর্যটন কেন্দ্রের টিকেট কেঁটে মশাল নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। ফটকের দুই পাশে রয়েছে দুটি শতবর্ষী বটবৃক্ষ। যাওয়ার পথে চোখে পড়বে একটি ছোট ঝর্না। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে হতো গুহামুখে। পাকা রাস্তা শেষ হলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে তারপর প্রবেশ করবেন কাঙ্খিত সেই গুহায়। গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোন প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না তাই মশাল নিয়ে প্রবেশ করতে হয়। সুরঙ্গের তলদেশ পাথুরে, পিচ্ছিল ও সেতসেতে। ছোট ঝর্নার স্রোত এর তলদেশে দিয়ে অনবরত বয়ে চলছে। তবে গুহাটি একেবারেই নিরাপদ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট, ওপাশ দিয়ে বের হতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এটি কিভাবে সৃষ্ট তা জানা যয়নি। বিশ্বের প্রাকৃতিক গুহার মধ্যে অন্যতম এই আলুটিলা সুরঙ্গ।


রিছাং ঝর্না

খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত নয়নাভিরাম এই রিছাং ঝর্না। জেলা সদর থেকে এর দুরত্ব প্রায় ১১ কি.মি.। শহর থেকে আলুটিলা পেরিয়ে মূল রাস্তা ধরে সামান্য পশ্চিম দিকে গেলেই শুনতে পাবেন ঝর্ণার কলধ্বণি। ঝর্ণার যাত্রাপথটা দারুণ রোমাঞ্চকর। আশেপাশের উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়, বুনো ঝোপ, নাম না জানা রঙীন বুনো ফুল, সমস্ত ব্যাতিক্রমী পরিবেশ ও সৌন্দর্য আপনাকে দিবে সজীব ও প্রানবন্ত এক অনুভুতি। যখন ঝর্ণার কাছে পৌছবেন পরন্ত জলের শীতল পরশ আপনার দেহ-মনকে নিবির স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে দিবে। উপর থেকে অবিরাম নেমে আসা জলরাশির উচ্ছাস আপনাকে অবিরত বিমোহিত করবে। ঝর্নার পাদদেশ থেকে ওয়াটার রাইড চড়ার মত স্লিপ করে নেমে আসা যায় সমতলে। পাথুরে পাহারের ঢাল দিয়ে অনবরত পানি নিচে পড়ার ফলে এই পিচ্ছিল পথের সৃষ্টি হয়েছে। সেই পানির স্রোতের সাথে নিচে নেমে আসতে পারেন। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে শৈশবে, মেতে উঠতে পারেন জলকেলিতে।


তৈদুছড়া ঝর্না

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত এই নয়নাভিরাম ঝর্না। ত্রিপুরা ভাষায় তৈদু মানে পানির দরজা। ৩০০ ফুট উচু পাহাড় হতে গড়িয়ে পড়া পানি এসে পরছে পাথুরে ভূমিতে। শীতল স্বচ্ছ টলমলে জলের কলকল করে ছুটে চলার শব্দে মুখিরত এর চারপাশ।

যেহেতু ঝর্নাটি সদর থেকে বেশ দূরে তাই এক্ষেত্রে খাগড়াছড়িতে রাত্রি যাপন না করে দীঘনালার কোন হোটেলে থাকাই ভাল হবে। এখানেও থাকার মত রেষ্টহাউজ রয়েছে, আগে থেকে যোগাযোগ করলে বুকিং করা সহজ হবে।

এ ঝর্নায় সারা বছরই প্রবাহ থাকে, তবে শীতকালে জল প্রবাহ কমে যায়, আর বর্ষার হয়ে উঠে পূর্ণ যৌবনা। বর্ষার শেষে আর শীতের আগে এখানে ঘুরতে যাওয়া উত্তম। এখানকার আদিবাসীদের আথিতেয়তা আপনাকে মুদ্ধ করবে। জলপ্রপাত, ঝিরি, পাহাড়ী জীবন, আকাশ পাহাড়ের মিতালী, শিবছড়ি পাহাড়ের পাথরের শিব মূর্তি সব কিছু মিলিয়ে আপনি পাবেন একটি পরিপূর্ণ ভ্রমনে আনন্দ।

যেভাবে যেতে হবেঃ খাগড়াছড়ি থেকে বাসে আসতে পারেন দীঘিনালায়। দীঘিনালায় রাত্রি যাপন করতে পারেন। পরদিন ভোরে তৈদুছড়া আসার জন্য একজন গাইড ও প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে রওনা হয়ে পড়ুন। গাড়িতে দীঘিনালা হতে চাপ্পাপাড়া তারপরপায়ে হেঁটে তৈদুছড়া পৌছবেন। ৩ ঘন্টা হাঁটার পর পৌছবেন ১ম ঝর্নায় এবং আরো ১ ঘন্টা পাহাড় ট্রেকিং ও ঝিরি পথে হেটেঁ পৌছবেন ২য় ঝর্ণায়।

কোথায় থাকবেনঃ খাগড়াছড়ি থাকার জন্য অনেক ভাল মানের হোটেল রয়েছে। দীঘিনালায় একটি রেষ্ট হাউজ রয়েছে, এখানেও রাত্রি যাপন করতে পারেন।

দেবতার পুকুর

স্থানীয় আদিবাসীদের মতে, পাহাড়ি বাসিন্দাদের পানীয় জলের অভাব নিবারণের জন্য স্বয়ং জল-দেবতা এ পুকুর খনন করেন তাই এ পুকুরের জলকে তারা দেবতার আশীর্বাদ বলে মনে করে। তাদের বিশ্বাস দেবতার অলৌকিকতায় পুকুরটি সৃষ্ট বলে এতো উঁচুতে অবস্থানের পরও পুকুরের জল কখনও শুকিয়ে যায় না। তারা মনে করেন পুকুরের তলায় বহু গুপ্তধন লুকায়িত আছে যা দেবতারা পাহারা দিচ্ছেন। অনেকের ধারণা এখানে এসে কিছু চাইলে তা দেবতারা পূরণ করেন। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে এখানে তীর্থ মেলা বসে, হাজার হাজার নরনারী পূণ্য লাভের আশায় এখানে সমাবেত হয় এবং ত্রিপুরাগণ যাগযজ্ঞাদি ক্রিয়া করে থাকেন। কিংবদন্তীর এই দেবতার পুকুর ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কাছে পূজনীয়, খাগড়াছড়িবাসীর কাছে গৌরব এবং পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষনীয় বিষয়।

খাগড়াছড়ি থেকে মহালছড়ি যাবার পথে মাইসছড়ি পর্যন্ত বাসে এরপর ইটের রাস্তা চান্দের গাড়িতে অবশেষে পায়ে হেটে পৌছতে হবে।

মন্তব্যসমূহ